তিনটি বই নিয়ে কথা
- ইয়াসমিন হোসেন
তিনটি বইয়ের লেখকই সাংবাদিক আবুল হোসেন খোকন। তিনি একসময় সার্বক্ষণিক রাজনৈতিক সংগঠক ছিলেন। পরে আসেন সাংবাদিকতায়। এখনও তিনি একাধারে সাংবাদিক, লেখক ও প্রামাণ্য চলচ্চিত্র নির্মাতা। তাঁর যে তিনটি বই নিয়ে এখানে বলা হচ্ছে সেগুলো হলো, ১. জনযুদ্ধের দিনগুলি, ২. কলম যুদ্ধ : প্রেক্ষাপট এক-এগারো এবং ৩. সূর্য সৈনিক।
জনযুদ্ধের দিনগুলি : তাঁর এই বইটিতে উঠে এসেছে ১৯৭১ এবং পরবর্তী প্রেক্ষাপটসহ ১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ সালের নানা ঘটনা। এতে এমনসব বিষয়ও উঠে এসেছে- যা এ পর্যন্ত কেও তুলে ধরার ক্ষেত্রে সৎসাহসী হননি। গ্রন্থটি পড়ে কেবলই চমকে উঠতে হয়, শিউরে উঠতে হয় ভয়ঙ্কর বাস্তবতাকে জেনে। সব মিলিয়ে এটি যেমন দু:সাহসিক একটি বই, তেমন জাতীয় ইতিহাসের জন্য এটি অতি গুরুত্বপূর্ণ দলিলও বটে।
বইয়ে তুলে ধরা নানা বিবরণের মধ্যদিয়ে উঠে এসেছে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত রূপ, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে জনগণের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা, তাঁদের প্রত্যাশা, যুদ্ধজয় পরবর্তী বাস্তবতা, ষড়যন্ত্র এবং শত্রুর সুদুরপ্রসারী নীলনকশার বিষয়গুলো। উঠে এসেছে ওই সময়ের সরকার এবং আওয়ামী লীগের রাজনীতিসহ জাসদ রাজনীতির ভেতরের কথা। এসেছে পাকিস্তান-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সৌদিআরব ও চীনপন্থী নেটওয়ার্কসহ এইসব মহলের রাজনীতির বিষয়। এসেছে ’৭১-এর মতোই ’৭৫ থেকে সামরিক-অসামরিক পর্যায়ে গণহত্যার আরেক ভয়াল এবং বিভৎস খন্ডচিত্র। এই বইয়ে উন্মোচিত হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা নির্মূলসহ লাল পতাকা দিয়ে লাল পতাকা নির্মূল এবং জনগণের মুক্ত চেতনা ধ্বংসের নীল নকশাকে ভিত্তি করে ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্রের স্বরূপ। মূলত ওই সময়ের প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে লেখক যা দেখেছেন, জেনেছেন এবং দেশময় যে বাস্তবতা বিরাজ করছিল- সেগুলিকেই তিনি কেবল জলজ্যান্ত করে তুলেছেন।
১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সবাই জানলেও ‘জনযুদ্ধের দিনগুলি’ বইয়ে মুক্তিযুদ্ধের অন্য এক স্বরূপ তুলে ধরা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধটা কেন জনযুদ্ধ ছিল, ৭ মার্চে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কোন্ যুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন, মহান বিজয়ের পর নেপথ্যে কী ঘটছিল, কেন ঘটছিল- এসব প্রশ্নের উত্তর বেরিয়ে এসেছে লেখকের স্মৃতিচারণে। এখানে উল্লেখ না করলেই নয় যেÑ আওয়ামী লীগের রাজনীতি, রক্ষীবাহিনী, বঙ্গবন্ধু সরকার সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে অনেক বই বা গ্রন্থ প্রকাশ হয়েছে। জাসদের রাজনীতি নিয়েও অনেকে লিখেছেন। কিন্তু ‘জনযুদ্ধের দিনগুলি’ বইয়ে এমনসব বিবরণ উঠে এসেছে- যা কখনও লেখা হয়নি। ’৭৫-এর ১৫ আগস্ট, ৩ নভেম্বর, বিশেষ করে ৭ নভেম্বর সম্পর্কিত নেপথ্যের নানা ঘটনাসহ ১৯৭৭ সালের অক্টোবরে বিমান বাহিনীতে গণহত্যার বিষয় এ বইয়ে তুলে ধরা হয়েছে। সুস্পষ্ট করা হয়েছে জেনারেল জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে প্রথমে সামরিক শাসন এবং পরে রাজনৈতিক দল বিএনপি গঠনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য-নীলনকশা সম্পর্কে। সেইসঙ্গে উঠে এসেছে জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের পরিকল্পিত উত্থানের বিষয়ও। সবমিলিয়ে বইটিতে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের বিভিন্ন পরিকল্পনা ও ছক সম্পর্কে চমকপ্রদ নানা বিবরণ পাওয়া যায়। দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রশ্নে যা নতুন প্রজন্ম এবং দেশপ্রেমিক যে কোন মানুষের জন্য শুভ ভাবনার সহায়ক হতে পারে। প্রকৃত রাজনৈতিক কর্মী-সংগঠক-নেতাদের জন্য বইটি হতে পারে সবচেয়ে বেশি শিক্ষণীয়।
বইটি সম্পর্কে লেখক তার ভাষ্যে উল্লেখ করেছেন, ‘একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে এদেশের জনগণ চেয়েছিলেন অতীতের যঘন্য শাসন ব্যবস্থাপনা পুরো পাল্টে যাবে। এখানে আর মুষ্টিমেয় শক্তি ক্ষমতা কব্জা করে বৃহত্তর মানুষের ওপর প্রভূত্ব করবে না। এদেশে জনগণই হবেন দেশের মালিক। এই মালিক হিসেবেই তারা সুখে-শান্তিতে বসবাস করবেন। তারা পেটপুরে তিনবেলা তিনমুঠো অন্ন পাবেন, কর্মসংস্থান পাবেন, মাথা গোজার আবাস পাবেন, রোগ-শোকে চিকিৎসা পাবেন। রাষ্ট্র এগুলোর সব দায়-দাযিত্ব নেবে। এখানে থাকবেনা কোন হানাহানি, দুর্নীতি-অনিময়, কিংবা মানুষে মানুষে কোন রকম ভেদাভেদ। থাকবে না কোন সশস্ত্র শক্তির দাপট। দেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ যে দেশ সৃষ্টির মহান যোদ্ধা- সে দেশ রক্ষার জন্য এই জনগণই হবেন আসল সামরিক শক্তি। এখানে মানুষ থাকবেন সবাই মুক্ত-স্বাধীন। থাকবেন বঞ্চনা থেকে মুক্ত। ধর্ম-বর্ণ-জাত-পাত-নারী-পুরুষ নির্বিশেষে আর্থ-সামাজিকভাবে সবাই থাকবেন সমঅধিকারের স্বর্গযুগে। মানুষ আরও আশা করেছিলেন- এই বিজয়ের দেশে থাকবে সত্যিকারের গণতন্ত্র এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ার সব ব্যবস্থা। তাঁরা জনগণভিত্তিক শাসন ব্যবস্থায় দাঁড়িয়ে আত্মমর্যাদায় বেঁচে থাকবেন, টিকে থাকবেন মাথা উঁচু করে। কিন্তু বাস্তব ঘটনা প্রবাহ ক্ষতবিক্ষত করে দিতে থাকে সব আশা-ভরসাকে।’
’৭৫-এর আগে-পরের ঘটনা প্রবাহ সম্পর্কে লেখক বলেছেন, ‘ওই সময়ের বিশেষ ঘটনার বিষয়গুলো যদি এখনও চাপা থেকে যায়- তাহলে ভেতরের বিপদটা নিরাপদে থেকে যাবে এবং ওই বিপদ মহাবিপদ হয়ে বার বার হামলে পড়বে। তাই একটি নি:সংশয় ভবিষ্যৎ স্বার্থের কথা ভেবেই এ গ্রন্থটি লেখা হয়েছে।’
‘জনযুদ্ধের দিনগুলি’ বইয়ের মুখবন্ধ লিখেছেন প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক ও নজরুল ইনস্টিটিউটের সাবেক নির্বাহী পরিচালক প্রয়াত রশীদ হায়দার। তিনিও বলেছেন, ‘১৯৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির প্রধান বিজয়ই শুধু ছিল না, ছিল শত সহস্র বছরের লড়াই-সংগ্রাম এবং অগ্রযাত্রার সর্বশ্রেষ্ঠ মাইলফলকও। এই যুদ্ধের ভেতর দিয়ে জাতি পেয়েছে তার স্বাধীন স্বদেশভূমি। স্বদেশভূমি লাভ করাই শেষ ছিল না। এই জনগোষ্ঠী চেয়েছিল পুরনো সমাজ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন; চেয়েছিল শোষণমুক্তি, গণতন্ত্র, আতœনির্ভরশীল একটি জাতীয় ব্যবস্থাপনা। লেখক-সাংবাদিক আবুল হোসেন খোকন তাঁর ‘জনযুদ্ধের দিনগুলি’ গ্রন্থে সেই আকাক্সক্ষার কথাই ব্যক্ত করেছেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধকে জনযুদ্ধ হিসেবে অভিহিত করেছেন; বলেছেন, জনযুদ্ধ এখনও শেষ হয়নি। কারণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শোষণমুক্ত-অসা¤প্রদায়িক-জনগণভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থাপনা বাস্তবায়নের যে লক্ষ্য ছিলÑ তা আজও অর্জিত হয়নি। আর এ কারণেই জনযুদ্ধ এখনও চলমান।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘আশা করি নতুন প্রজন্ম এবং দেশ ও মানুষের মঙ্গল নিয়ে যাঁরা ভাবেন- তাঁদের জন্য এ গ্রন্থটি হবে অতি গুরুত্বপূর্ণ।’
এটি মূলত সাংবাদিক-লেখক আবুল হোসেন খোকন-এর রাজনৈতিক স্মৃতিচারণমূলক বই। এর প্রকাশক জাগৃতি প্রকাশনী, ৩৩ আজিজ সুপার মার্কেট, শাহবাগ, ঢাকা-১০০০। প্রকাশিত ২০৮ পৃষ্ঠার এ বইটির দাম ৩২৫ টাকা। জি এম খলিলুর রহমান ও আসমা খাতুনের স্কেচ অবলম্বনে এর প্রচ্ছদ করেছেন জাহাঙ্গীর আলম মুকুল। জাতীয় পতাকা, সামরিক হেলমেট, বাঙালির মুখের ভাষা অ আ ক খ লেখা গুলিবিদ্ধ স্লেট, পাকিস্তানি পতাকায় মোড়ানো ইউ এস এ’র তৈরি বুলেট- ইত্যাদি মিলিয়ে তৈরি করা প্রচ্ছদ পুরো বইয়ের থিম তুলে ধরেছে। বইটি জাগৃতি প্রকাশনী ছাড়াও বইবাজার ডট কম, রকমারি ডট কম, আমাজন এবং বাংলা একাডেমি আয়োজিত একুশের বই মেলায়ও পাওয়া যায়।
কলম যুদ্ধ : ২২৪ পৃষ্ঠার এ গ্রন্থটি বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আবির্ভাব, ওই সরকারের নানা কর্মকান্ড, তাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যসহ আনুসঙ্গিক রাজনৈতিক বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে লেখা। লেখক আবুল হোসেন খোকন-এর এটি ৬ষ্ঠ গ্রন্থ।
গ্রন্থের শুরুতেই লেখক তাঁর নিজের মন্তব্যে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি পরবর্তী প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে বলেছেন, “তখন যুদ্ধ করা আর কলাম লেখায় কোন তফাৎ ছিল না। কারণ বেঘরে প্রাণ হারাবার ভয় ছিল। সাদা পোশাকী লোকদের হাতে আটক কিংবা গুম হয়ে যাবার বিপদ ছিল। ছিল সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প কিংবা ব্লাকহোলের পৈশাচিক নির্যাতনে নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা। তখন এসবই ঘটছিল অহরহ। এই বাস্তবতায় বাঘা বাঘা বহুজন নাকে খৎ দিয়ে ‘ভাল মানুষটি’ সেজে গিয়েছিলেন। অনেকে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন পদলেহনে। কেবল হাতেগোনা দুঃসাহসিক কিছু লেখক-সাংবাদিক ছিলেন এর বাইরে। তাঁদের কলম ছিল আপোসহীন। বিপদের চোখে চোখ রেখে তাঁরা তুলে ধরেছেন সত্যকে। করেছেন অন্যায়ের প্রতিবাদ। তাঁরা মানুষকে জাগিয়েছেন সচেতনতায়। এজন্য তাঁদের রীতিমতো লড়তে হয়েছে এবং যুদ্ধ করতে হয়েছে। এককথায় সময়টা ছিল যুদ্ধের, আর আমাদের কলম ছিল যোদ্ধা। ‘এক-এগারো’র এই যুদ্ধভিত্তিক সময়ে আমার নির্বাচিত কলামগুলোর গ্রন্থিত রূপকেই ‘কলম যুদ্ধ’ হিসেবে নামকরণ করা হয়েছে।
২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মোড়কে বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিল একটি বিশেষ গোষ্ঠী। এদেরকে কেও বলতেন ‘এক-এগারো’র সরকার, কেও বলতেন ‘ফখরুদ্দিন-ম উ’ বা ‘বিশ্বব্যাংক-মিলিটারি’ সরকার। তবে সিংহভাগ মানুষ এবং আন্তর্জাতিক মহল বলতেন, এটা ছিল ‘আর্মি ব্যাক্ড সরকার’। এদের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পেছনে যেমন ছিল রাজনৈতিক ঘটনাগত নানা কারণ, তেমন ছিল দেশি-বিদেশি অশুভ চক্রের গভীর ষড়যন্ত্র। মূলত নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচনের দাবিকে ভর করে উঠে এসেছিল এই ‘এক-এগারো’। তিন মাসের শর্তে আসা এই মহলকে ছক অনুযায়ী আজীবন ক্ষমতায় রাখার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু তা ব্যর্থ হয়ে যায় দুঃসাহসী কলম যোদ্ধা এবং দেশপ্রেমিক জনগণের তীব্র প্রতিরোধে। অবশেষে দুই বছরের মাথায় এরা বাধ্য হয়েছিল নির্বাচন দিয়ে বিদায় নিতে।”
লেখক উল্লেখ করেছেন, ‘কলম যুদ্ধ চালাতে গিয়ে দুই বছরে প্রায় দেড় শ’ কলাম লিখেছিলাম। এগুলো প্রকাশ হয়েছিল দেশি এবং বিদেশি সংবাদ মাধ্যমে। তবে এই বইটিতে বাছাই করে স্থান দেওয়া হয়েছে গণমাধ্যমে প্রকাশিত সেইসব কলামÑ যেগুলো শুধু সমসাময়িকই নয়, বাস্তবতার বিবেচনায় এখনও বর্তমান, এবং ভবিষ্যত প্রশ্নেও প্রবহমান। বিশেষ করে এই দেশে আবার যখন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে নানা তৎপরতা চালানো হচ্ছে, এবং সরকারবিরোধী কোন কোন দলের পক্ষ থেকে ফের ‘এক-এগারো’ ফিরিয়ে আনার হুমকিও দেওয়া হচ্ছে- তখন এগুলোর গুরুত্ব অপরিহার্য। কারণ ইতিহাসই কেবল আয়নার মতো করে মুখ দেখায়। আর এই ইতিহাসই পরিস্কার করে দিতে পারে নানা পরিণতিসহ ভবিষ্যৎ সম্পর্কিত সব বিষয়। শিক্ষণীয় হিসেবে ঘটনা প্রবাহকে বিবেচনায় নিতেই এ বইটির অবতারণা।’ ‘ওই সময়ের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক এবং সামাজিক ঘটনা প্রবাহের ওপর বিশ্লেষণ- মন্তব্য বা অভিমতভিত্তিক নির্বাচিত এ কলামগুলো বাংলাদেশের জাতীয় কয়েকটি দৈনিক সংবাদপত্রসহ ওয়াশিংটন, নিউইয়র্ক, ইউএসএ, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, লন্ডন ও সৌদি আরবের বহুল প্রচারিত ইন্টারনেট নিউজ মিডিয়ায় প্রকাশ হয়েছিল।’
কলম যুদ্ধ গ্রন্থটির মুখবন্ধ লেখেন প্রয়াত দেশের পুরোধা সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী। তিনি উল্লেখ করেন, ‘আবুল হোসেন খোকন সাংবাদিক হিসেবে দুটো চোখ খোলা রেখে এবং নিজে সংগ্রামের বিভিন্ন পর্যায়ে অংশগ্রহণ করে নিজেকে ঋদ্ধ করেছেন। সুদীর্ঘকালের এই অভিজ্ঞতা রাজনীতি-সংস্কৃতি এবং সাংবাদিকতায় সমৃদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধ যার চৈতন্যে, সেই সাংবাদিক আজ ‘কলম যুদ্ধ’ শিরোনামে রচনাগ্রন্থ সংকলন করেছেন। যার প্রতিটি লেখাই রাজনীতি সংশ্লিষ্ট। লেখার মধ্যদিয়ে আবুল হোসেন খোকন কলমযোদ্ধা হিসেবে তাঁর প্রগতিশীল রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখা সময়টাকেই তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। এখানে বিশেষভাবে সংযোজিত হয়েছে সেই অগ্রহণযোগ্য ‘এক-এগারো’র সময় ও কর্মকান্ড। তাঁর নিবন্ধ থেকে ঐ সময়কালের চালচিত্র, এমনকি চক্রান্ত জালের বিস্তার লক্ষ্য করা যাবে। গ্রন্থটি পড়লে রাজনৈতিক মহল যেমন উপকৃত হবেন, তেমন ইতিহাস ও গবেষণার ছাত্রসহ অন্যরাও উপকৃত হবেন।’
কলম যুদ্ধ গ্রন্থের ৫০টি লেখার মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখ কয়েকটি লেখার শিরোনাম হলো, কী করবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, রাজনীতি কেন কলুষিত হলো, ড. ইউনূসের রাজনীতি, মানুষের প্রত্যাশা বনাম জেনারেল মঈন ইউ আহমেদের এজেন্ডা, পাকিস্তানি ট্রেনে বাংলাদেশ, ‘এক-এগারো’র সদরে অন্দরে, ফেঁসে গেছে শাসক সিন্ডিকেটের মতলব, পরিবারতন্ত্রের যতো কথা, ‘মাইনাস টু’ এজেন্ডার রহস্য, আতঙ্কে তত্ত্বাবধায়ক সরকার, টার্গেট শেখ হাসিনা ও মুক্তিযুদ্ধ, কারা হত্যা করতে চায় বেনজির-হাসিনাকে, বীরশ্রেষ্ঠদের নিয়ে কি হচ্ছে, প্রাণে রক্ষা পেলেন শেখ হাসিনা, দুই নেত্রীকে এক টেবিলে বসানোর চেষ্টা কেন, সন্ধিক্ষণে বাংলাদেশ।
‘কলম যুদ্ধ, প্রেক্ষাপট এক-এগারো’ গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে জাগৃতি প্রকাশনী। এটি বইবাজার ডট কম, রকমারি ডট কম, আমাজন এবং বাংলা একাডেমির একুশে বইমেলায় পাওয়া যায়।
সূর্য সৈনিক : লেখক ও সাংবাদিক আবুল হোসেন খোকন-এর সূর্য সৈনিক গ্রন্থটির প্রকাশক জাগৃতি প্রকাশনী। পৃষ্ঠা ২০৮। প্রচ্ছদ করেছেন আহমেদ ফারুক। গ্রন্থটি উৎসর্গ করা হয়েছে প্রয়াত দেশপ্রেমিক শিল্পী শিবানী নাগ, শ্যামল দাস, মীরা রায়, মুকুল আহমেদ ও হাফিজুর রহমান কাজলকে। এটি লেখকের ৯ম গ্রন্থ।
গ্রন্থের বিষয়বস্তু সম্পর্কে লেখক তাঁর নিজের কথায় লিখেছেন, ‘গ্রন্থটি বিশেষ এক সময়কে কেন্দ্র করে লেখা। দেশে তখন সামরিক শাসনের দোর্দন্ড প্রতাপ। অন্যায়, অবিচার, শ্রেণিবৈষম্য, শোষণ-বঞ্চনা এবং ধর্মবর্ণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে এ সময় এক তরণ গোষ্ঠী নিজেদের উৎসর্গ করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যাশিত বাংলাদেশ গড়তে তারা পথে নেমেছিলেন। নিজেদের সঙ্গে পরিবারকেও শামিল করেছিলেন। বৈরী সমাজ ও তার পরিচালকদের বিরুদ্ধে শৈল্পিক লড়াই ছিল সবার হাতিয়ার। ছিল গণমানুষের মনজগতে এমন এক বিপ্লবী জাগরণ এবং সংঘবদ্ধতার জন্ম দেওয়া, যাতে সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালকরা মানুষের সেবকে পরিণত হন। নিঃসন্দেহে এ ছিল কঠিন এবং দুঃসাহসিক কাজ। এই কাজের খÐচিত্রই গ্রন্থে উপস্থাপন করা হয়েছে।’
গণজাগরণমূলক এ গ্রন্থে আশির দশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শাণিত তরুণ-তরুণি-কিশোর-কিশোরী এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যদের অকূতভয় লড়াই-সংগ্রামের ঘটনাবলী উপস্থাপিত হয়েছে। ব্যতিক্রমী এই সংগ্রামীরাই সূর্য সৈনিক। একটি নতুন ভোরের স্বপ্নে বিভোর সংগ্রামীরা শৈল্পিক হাতিয়ারে সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ, সমরতন্ত্র, স্বৈরতন্ত্র এবং শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে বিশাল আত্মত্যাগ করেছেন। এমনকি জেল-জুলুমেরও শিকার হয়েছেন। নব্বয়ের গণঅভ্যুত্থান পর্যন্ত সময়ের এ ঘটনা ইতিহাসের মাইলফলক হয়ে আছে। বিস্মৃতির মুখে থাকা সেই ইতিহাসই গ্রন্থ আকারে তুলে ধরা হয়েছে, যা সত্যিই ভবিষ্যৎ সংগ্রামের ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা হতে পারে। গ্রন্থের আরেকটি বড় দিক হলো- একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের পরেও কেন মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়নি, রাজনৈতিক শক্তিগুলো কেন জনগণের সেবকে পরিণত হয়নি, কেন বার বার দিক ভ্রান্তি, সাংস্কৃতিক আন্দোলনের হাতিয়ার গণসঙ্গীত, গণনাটক বা গণসংস্কৃতির রূপরেখা কি হওয়া উচিত- ইত্যাদি বিষয়গুলো সূর্য সৈনিকদের কর্মযজ্ঞের ভেতর দিয়ে স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। উঠে এসেছে সমাজ-রাজনীতি-অর্থনীতির সঙ্গে সাংস্কৃতিক সংগ্রামের ওৎপ্রোৎ সম্পর্কের বিষয়টিও। সব মিলিয়ে বলা যায় ‘সূর্য সৈনিক’ গ্রন্থটি নতুন প্রজন্ম এবং প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জন্য একটি মাইল ফলক।
এটি জাগৃতি প্রকাশনী ছাড়াও বইবাজার ডট কম, রকমারি ডট কম, আমাজন এবং বাংলা একাডেমির একুশে বইমেলায় পাওয়া যায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Thanks for Message