দার্জিলিং ভ্রমণ (পর্ব : এক) লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
দার্জিলিং ভ্রমণ (পর্ব : এক) লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

শনিবার, ২৯ মে, ২০২১

দার্জিলিং ভ্রমণ (পর্ব : এক)


 

দার্জিলিং ভ্রমণ (পর্ব : এক)

-       ইয়াসমিন হোসেন

১৫ মার্চ ২০১৩ ভারতে যাওয়া নিয়ে দারুণ এক টেনশন কাজ করছিল এটাই আমার এবং স্বামী আবুল হোসেন খোকনের প্রথম বিদেশ সফর শুনেছিলাম ইমিগ্রেশন ক্রশ করতে নানান ঝামেলার মুখোমুখি হতে হয় লাগেজসহ গোটা দেহ তন্ন তন্ন করে তল্লাশী করা হয় আপত্তিকর মনে হলে অনেক জিনিসপত্রই নিতে দেয়া হয় না

আমাদের দুজনের কাছে রয়েছে দুটো মোবাইল, সঙ্গে একটি ভারতীয় এয়ারটেল-এর সীম আরও রয়েছে বাংলাদেশের টাকা, যেটা নিয়ে যাবার জন্য রেখেছি রয়েছে ডিজিটাল ক্যামেরা, ক্যামেরার চার্জার, দুইসেট ব্যাটারি, দুটি মেমোরি কার্ড, কেবল কর্ড, দুই মোবাইলের চার্জার, এর কেবল কর্ড, ইয়ারফোন, জিবির পেনড্রাইভ, ইলেক্ট্রিক ওয়াটার হিটার ব্যাগ এবং চার্জার কর্ড ইত্যাদি এসব ইলেক্ট্রনিকস জিনিসপত্র আপত্তিকর মনে হতেই পারে। জিরো পয়েন্টে নামার পর  প্রথমেই আমরা ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ করলাম এখানকার কর্মকর্তা আলাউদ্দিন ভাই পূর্ব পরিচিত হওয়ায় অল্প সময়ের মধ্যে সব কাজ শেষ করা সম্ভব হয় তারপর সীমান্ত পার হতেই বিএসএফের একজন পাসপোর্ট দেখতে চাইলেন আমাদের হাতেই ছিল ওটা দেখাতেই তিনি স্বসম্মানে যেতে দিলেন ভারতীয় কাস্টমস অফিসে মিনিট পাঁচেক বসতে হলো তারপর প্রয়োজনীয় কাজ শেষ হলো

আমাদের কাছে ১শ ডলারের তিনটি নোট এবং বাংলাদেশি নগদ টাকা ছিল সাড়ে ১২ হাজার এরমধ্যে বাংলাদেশি টাকা এবং একটি একশ ডলারের নোট ভাঙালাম মোট ভারতীয় টাকা হলো প্রায় ১৪ হাজারের মতো মানি এক্সচেঞ্চার অলিয়ার ৫০ টাকা ভাড়ায় একটি রিকশা ভ্যান ঠিক করে তাতে লাগেজ তুলে দিলেন বলে দিলেন- কিভাবে শিলিগুড়ি যেতে হবে রিকশা ভ্যানে করে যেতে হবে চ্যারাবান্ধা বাইপাসে ওখান থেকে শিলিগুড়ির বাসে উঠতে হবে এই পথ ছাড়াও আরেকটি পথ আছে, যেটায় রিকশা ভ্যানে করে যেতে হয়, তারপর ১০টাকা ভাড়ায় অটো ট্যাক্সিতে করে যেতে হয় ময়নাগুড়ি বাসস্ট্যান্ডে সেখান থেকে উঠতে হয় শিলিগুড়ির বাসে কিন্তু আমরা অতো ঘুরপথে না গিয়ে সোজা এবং সহজ পথেই রওনা হলাম

রিকশা ভ্যানে যখন গ্রাম্য পথ পাড়ি দিচ্ছিলাম তখন মনেই হচ্ছিল না যে এটা অন্য দেশ সব অবিকল বাংলাদেশের মতো শুধু বাড়িঘরের সামনে রাখা প্রতিমাগুলো স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিল এটা বাংলাদেশ নয় ভারতের মাটিতে প্রবেশ করেও আমাদের মোবাইলে বাংলাদেশি নেটওয়ার্ক কাজ করছিল আমি এই সুযোগে পাবনায় মায়ের কাছে ফোন করে ভারতে প্রবেশের বর্ণনা দিতে লাগলাম

ভারতের মাটিতে পা রাখার জন্য সারা জীবন কতো যে স্বপ্ন দেখেছি, কল্পনায় এগিয়েছিÑ তার হিসেব নেই সেই ভারতে প্রবেশ করে দিব্বি দেশের মাটির মতো ভ্যানে করে এগিয়ে চলেছিÑ কী দারুণ অনুভূতি যে হচ্ছিল, ভাষায় প্রকাশের মতো নয় বয়স্ক চালক বেশ ধীরে ধীরে ভ্যান টেনে যাচ্ছিলেন। বাইপাসে পৌঁছার পর ভাড়া দিয়ে আশপাশে ভাল করে দেখলাম একটা মোড় মতো জায়গা ডান দিক থেকে পাকা রাস্তা এসে বাঁক নিয়ে বামের দিকে চলে গেছে ওটাই শিলিগুড়ির পথ মাঝে মাঝে মালবাহী ট্রাক এবং সিএনজি জাতীয় গাড়ি চলে যাচ্ছিল সামনেই রাস্তার ওপারে কয়েকটি দোকান, এপারেও তাই চায়ের ছোট ক্যান্টিনও রয়েছে গুদাম ঘর জাতীয় বেশ কিছু ইটের ঘরও আছে ডানের দিকে একটি মুদি দোকান দেখতে পেলাম সেখানে মোবাইল ফোনের একটা সাইনবোর্ড ঝুলছে ভাবলাম এই সুযোগে ইন্ডিয়ান সীমটি মোবাইলে ঢুকিয়ে রিচার্জ করে নেয়া ভাল আমার মোবাইলে বাংলাদেশের গ্রামীণফোন এবং রবি সীম ছিল দেখলাম এখনও বাংলাদেশি নেটওয়ার্ক রয়েছে রবির সীমটি খুলে সেখানে ইন্ডিয়ার এয়ারটেল-এর সীম সেট করে নিলাম তারপর ছুটলাম ওই মুদি দোকানে তাকে জানালাম 'পাওয়ার করতে এবং টাকা ঢোকাতে চাই দোকানী যুবক বললো 'পাওয়ার করতে ৩৬ টাকা লাগবে তবে তার কাছে ব্যালেন্স না থাকায় ৬০ টাকার বেশি ফ্লেক্সিলোড করতে পারবে না তাতেই রাজী হলাম কারণ তখন আমার সীম চালু করাটাই বড় কাজ ছিল ওকে টাকা দিয়ে রিচার্জ করার কাজ শেষ করলাম

এরমধ্যে বাস এসে গেল কন্ডাক্টরকে জিজ্ঞাসা করে উঠে পড়লাম ভাড়া ৫০ টাকা করে একেবারে পেছনের দিকে সীট মিললো দেখলাম আমাদের প্রবেশের জন্য অন্য যাত্রীরা ব্যাগ সরিয়ে সহযোগিতা করলো, যেটা আমাদের দেশে সাধারণত কেও করে না এরপর ছুটলো বাস দুপাশে মাঠ-ঘাট, বাড়ি-ঘর-দিগন্ত দেখতে দেখতে চলেছি সব আমাদের দেশের মতোই তফাৎ চোখে পড়লো না তবে আমাদের দেশের মতো ভাড়া নিয়ে কোন কথাকাটি দেখলাম না কন্ডাক্টর যে ভাড়া বলছেন যাত্রীরা বিনা বাক্যব্যয়ে তা দিয়ে দিচ্ছেন আরও দেখলাম, যেখানে সেখানে বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠাবার কারবার নেই সিট ফাঁকা থাকলেও স্টপেজ ছাড়া থামানো বা যাত্রী ওঠানো হচ্ছে না আবার সিট ছাড়া দাঁড়িয়েও যাত্রী নেয়া হচ্ছে না ভাল লাগলো নির্ভেজাল পরিবেশ আমাদের দেশে এমন হয় না

লক্ষ্য করলাম বাসের যাত্রীরা বাংলায় কথা বলছেন রাস্তার ধারের  দোকান-পাটের সাইনবোর্ডও বাংলায় লেখা বুঝলাম এসব জায়গায় বাঙালিদের বসবাস যাবার পথে বেশ কয়েকটি বড় বড় ব্রিজ এবং তার নিচে নদীর চিহ্ন দেখলাম নদী শুকিয়ে খা খা করছে ঠিক আমাদের দেশের মরুকরণের মতোই ভাবলাম, শুধু শুধু আমরা কেনভারত পানি না দেয়ায় আমরা মরুভূমির শিকার হচ্ছি বলে দাবি করি! সমস্যাটা তো ওদেরও এটা প্রকৃতিগতভাবে আঞ্চলিক সমস্যার বিষয়

 

---------- চলবে----------

সৌদি আরবের পথ [The way to Saudi Arabia]

       সৌদি আরবের পথ [The way to Saudi Arabia] The way to Saudi Arabia [সৌদি আরবের পথ] : This short documentary is compiled from video foot...