দার্জিলিং ভ্রমণ (পর্ব : চার) লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
দার্জিলিং ভ্রমণ (পর্ব : চার) লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

বৃহস্পতিবার, ১০ জুন, ২০২১

দার্জিলিং ভ্রমণ (পর্ব : চার)



 

ভ্রমণ (পর্ব : চার)

ইয়াসমিন হোসেন

দার্জিলিংয়ের পথে :

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জেলা দার্জিলিং সমূদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা ,০৫০ মিটার, অর্থাৎ ,৭৩০ ফুট জনবিস্তৃতি ৩২ হাজার বর্গমাইল পর্যন্ত পাহাড়ী এলাকার বিস্তৃতি ১০.৫৭ কিলোমিটার বা .০৮ বর্গমাইল বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় লাখ ৪০ হাজারের মতো পাহাড়ি স্টেশন হিসেবে খ্যাত দার্জিলিংয়ের ভাষা নেপালী, বাংলা, হিন্দি এবং ইংরেজি মূল উৎপাদনী পণ্য হলো চা তথ্যগুলো ওয়েবসাইট থেকে জেনেছি

আমরা নাস্তা শেষ করে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে হোটেল ছাড়লাম ম্যানেজারের নির্দেশে রিকশা ডেকে ভাড়া ঠিক করে দিয়েছিল বয় বাসস্ট্যান্ডে যেতে ভাড়া ২০টা রিকশাওয়ালা আমাদের মূল সড়ক দিয়ে স্ট্যান্ডে নিয়ে গেল সেখানে লাগেজ নামানোর পর রিকশাওয়ালাই দেখিয়ে দিলো টিকেট কাউন্টার কাউন্টারে গিয়ে সামনের দুটি আসন চাইলাম এটা ছিল রাজধানী ট্রাভেল্স এজেন্সির কাউন্টার দুটো টিকেটের দাম নিলো ২৬০ টাকা পাশেই নানাস্থানে যাওয়ার জিপগাড়ি সারি সারি দাঁড়িয়েছিল আমাদেরটার নম্বর ছিল ৪৪৭৩ খুঁজে বের করতে সামান্য সময় লাগলো তারপর লাগেজ নিয়ে আসতেই হেলপার সেগুলো রেলিং ঘেরা ছাদে উঠিয়ে নিলো আশঙ্কা  করলাম পাহাড়ে ওঠার সময় পড়ে না যায় পরে খেয়াল করে দেখলাম সব জিপের ছাদেই এভাবে লাগেজ রাখা তবে ত্রিপল জাতীয় কাপড় দিয়ে ঢেকে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে লক্ষ্য করলাম আমাদেরটায়ও সে ব্যবস্থাই আছে সুতরাং নিশ্চিন্তে জিপের সামনের আসনে বসে পড়লাম আমি বসলাম বামে জানালার ধারে, আর স্বামী ডানে তার ডানে ড্রাইভারের আসন তখনও যাত্রী ওঠানো শেষ হয়নি যাত্রী নেয়া হয় সামনে দুজন, মাঝের আসনে চারজন এবং পেছনে দুপাশে দুজন দুজন করে চারজন মোট ১০ জন। বসার পর অপেক্ষা করছি কখন জিপ ছাড়বে প্রায় পৌনে একঘণ্টা চলে গেছে, কিন্তু ছাড়ছে না বড্ড বিরক্ত বোধ করছি ১০ জন যাত্রীর আসন অনেক আগেই পূর্ণ হয়ে গেছে তারা চুপচাপ বসে আছে কিন্তু ড্রাইভারও আসছে না, জিপও ছাড়া হচ্ছে না লক্ষ্য করলাম জিপ ছাড়ার জন্য কেও বলছেন না, বিরক্তিও প্রকাশ করছেন না আমাদের দেশে হলে চিৎকার-গালাগালি শুরু হয়ে যেতো স্বামী কিছু বলার জন্য উশখুশ করতেই আমি বললাম, এখানকার নিয়ম তো আমরা জানি না কেও যখন বিরক্ত হচ্ছে না, তখন অপেক্ষা করাটাই ভাল হয়তো এটাই এখানকার নিয়ম-শৃঙ্খলা হয়তো কর্তৃপক্ষ থেকে জিপ ছাড়ার নির্দিষ্ট সময় আছে সময় হলেই হয়তো ছাড়বে

টিকেটে অবশ্য সময়ের ঘর আছে, কিন্তু সেটা ফাঁকা তাই কিছু জানতে পারলাম না বসে থাকার সিদ্ধান্ত নিলাম

সামনের মেইন রাস্তা দিয়ে ছুটে যাচ্ছিল বাস, প্রাইভেট কার, জিপ, ঠেলা, রিকশা, ট্রাক ইত্যাদি তবে আমাদের দেশের সড়কগুলোতে যেভাবে জট এবং যানবাহনের ভিড় দেখা যায়Ñ এখানে প্রধান সড়ক হওয়া সত্ত্বেও ওসবের ছিটেফোটাও নেই সব চলছে সুশৃঙ্খলভাবে ট্রাফিক দায়িত্ব পালন করছে সুন্দরভাবে দেখলাম স্কুলের ছেলে-মেয়েরা পায়ে হেঁটে অথবা নিজেরা বাইসাইকেল চালিয়ে যাচ্ছে সঙ্গে কারও অভিভাবক নেই নিজেরা নিজেদের মতো করে চলছে অনেক কিশোরী, তরুণি, যুবতী সাইকেল চালিয়ে যাচ্ছে প্রাইভেটকারের সংখ্যা একেবারেই কম আমাদের দেশের টেম্পুর মতো কিছু যান চলছে, এগুলো আকারে বড় এবং উঁচু এসব যানে যারা যাচ্ছেন দেখেই বোঝা যায় কর্মস্থলে ছুটছেন বাসগুলো যাচ্ছে দূরের যাত্রী নিয়ে রাস্তায় কয়েকটা বড় সাইজের গরু অলস ভঙ্গিতে হাঁটছিল এগুলোর পাশ কাটিয়ে যাচ্ছিল যানবাহন নারীর মধ্যে অনেকেই কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন রিকশায় অথবা হেঁটে অনেক নারী-পুরুষ উভয়ই মটরবাইক চালিয়ে কাজে যাচ্ছিলেন সব মিলিয়ে মানুষজনের কেও এমনি এমনি ঘুরে বেড়াচ্ছেন না, সবাই কোন না কোন কাজে ব্যস্ত। একটু অনুসন্ধানী চোখে তাকালেই দেখা যায়, আমাদের দেশের মতো এখানকার জীবন-যাত্রায় ব্যস্ততা নেই, নেই সামান্যও অস্থিরতা মানুষজন চলছেন আত্মবিশ্বাসীভাবে থেকে একটা সমাজ বা একটা জীবনব্যবস্থার অনেক কিছু আঁচ করা যায় স্বাবলম্বীতা এবং আত্মনির্ভরশীলতার ব্যাপারটিও ফুটে ওঠে এরমধ্যে সুষ্ঠু সমাজব্যবস্থা না হলে একরকম আশা করা যায় না আসলে একটি সমাজ সুস্থ বা স্বাভাবিক না হলে সেখানে অস্বাভাবিকতা, ব্যস্ততা আর অস্থিরতা থাকবেই যেটা আমাদের দেশের জন্য প্রযোজ্য। অবশেষে আমাদের জিপ ছাড়লো ঠিক ১০টায় চালক একজন অবাঙালি হিন্দিভাষী আর কালবিলম্ব না করে জিপ ছুটলো গন্তব্যে মেইন রোড ধরে এগুনোর পর হঠাৎ করেই বামের পথে ঢুকলো একটু এগুনোর পরেই ক্যান্টনমেন্ট সামরিক ভবনগুলোর মাঝখানদিয়ে পথ আস্তে আস্তে উঁচুনিচু পথ বাড়ছে আরও কিছুদূর যাবার পর বড় আকারের একটি চা বাগান পাড়ি দিতেই বাতাসে অন্যরকম কিছু অনুভূত হলো সামনে তাকিয়ে দেখলাম মেঘের ভেতর দেখা যাচ্ছে উঁচু দেয়াল সামনের সবদিকে এই দেয়াল এগুতেই বোঝা গেল ওগুলো দেয়াল নয়, পাহাড় সামনের গোটাটাই পাহাড় নি:শ্বাস নেবার বাতাসও এই কারণে কেমন যেন অন্যরকম লাগছিল কে কে যেন আগেই বলে দিয়েছিলÑ পাহাড়ে ওঠা শুরু হলেই শ্বাসনালীতে চাপ বাড়তে থাকবে, রক্তচাপও বদলে যেতে থাকবে, মাথা ঘুরতে পারে, শরীর অসুস্থ থাকলে নানা প্রতিক্রিয়া হতে পারে সেইসঙ্গে শীত অনুভূত হতে থাকবে যতো উপরে ওঠা হবে ততো শীত জেঁকে বসবে

আমরা গরম আবহাওয়া থেকে ছুটছি শারীরিক তেমন কোন প্রতিক্রিয়া হচ্ছে না আমি যেহেতু জিপের দরজার পাশে বসেছি, যেখান থেকে বাম পাশের পাহাড়ী উঁচু-নিচু জায়গা দেখা যাচ্ছে আমার শুভাকাঙ্ক্ষিরা সাবধান করে দিয়েছেÑ কোন অবস্থায়ই যেন পাহাড়ে ওঠার সময় নিচের দিকে না তাকাই তাহলে মাথা ঘুরে যেতে পারে কারণ দৃষ্টির সীমানা ছাড়িয়ে দেখা যাবে অতল-তল সাংঘাতিক ভয় পাওয়াই স্বাভাবিক আমি অবশ্য দিব্বি জিপের জানালায় হাত রেখে মোবাইল ইয়ারফোনে গান শুনতে শুনতে চলেছি 

গাড়ি ছুটছে ৫০ থেকে ৬০ মাইল বেগে সামনে থেকেও এরকম অনেক গাড়ি পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে আর সামান্য এগুতেই দেখা গেল বাঁক আর সেই বাঁক ওঠা শুরু করেছে পাহাড়ের ঢাল বেয়ে আমাদের জিপ একই বেগে উঠে পড়লো ঢাল বেয়ে শুরু হলো এঁকেবেঁকে যাওয়া পাহাড়ি সরু পথ সরু পথ এমনই যে পাশ দিয়ে এরকম আরেকটি জিপ পার হতে পারে তবে দেখলাম এই গতিতেই নিশ্চিন্তে সামনের জিপগুলো পাশ কাটাচ্ছে কোনরকম থেমে দাঁড়ানোর কারবার নেই

যতো উপরে উঠছি ততো কেমন একটা ঝিম মারা ভাব আসছে মাথা ভার মনে হচ্ছে একটা ভারী গুমগুম শব্দ প্রতিধ্বনিত হচ্ছে মাথার ভেতর জিপ গাড়ি মোড় ঘুরে ঘুরে এগিয়ে চলছে আতঙ্ক তৈরি করে কারণ পাকা পিচের রাস্তা খাঁজকাটা হলেও পাশে কোন রেলিং নেই কোথায় কোথাও / ইঞ্চি উঁচু ইটের ঘের আছে বটে তবে ওগুলো কোন প্রতিবন্ধকই নয় আতঙ্কের কারণ হলো, সড়ক পথের পাশে কোন কূল-কিনারা নেই একেবারে অতলতল এমনই খাড়া ঢালু যে, কেও হটাৎ পড়ে গেলে তার হাড়হাড্ডিও খুঁজে পাওয়া যাবে না পাহাড়ের ঢালু কতো নিচে চলে গেছে কোনভাবেই দেখা যায় না নিচে সাদা কুয়াশা বা মেঘে ঢাকা হয়তো শত সহস্র ফুট দূরে আছে সমতল ভূমি সামান্য অসাবধান হলেই জিপ রাস্তা থেকে শূন্যে উড়াল দেবে এবং উধাও হয়ে যাবে কুয়াশার মেঘে সেখান থেকে হাজার হাজার ফুট নিচের পাহাড়ে পড়ে ড্রপ খেতে খেতে চলে যাবে আরও শত শত ফুট পাহাড়ি অতলতলে এতো উঁচুতে আমরা উঠে পড়েছি যে, পাশে তাকিয়ে শিউড়ে উঠছি জিপের সহযাত্রীরা আগে হিন্দি এবং নেপালী ভাষায় গল্প করছিল এখন সবাই নিশ্চুপ পাহাড়ের ঢাল বেয়ে অনেক স্থানেই আবার বাড়ি-ঘর-বসতি-দালান-কোঠা রয়েছে কীভাবে পাহাড় জুড়ে এসব বসতি ভবন গড়ে তোলা হয়েছেÑ কোন বিজ্ঞান চিন্তায়ও  ভেবে পেলাম না

 

---------- চলবে ----------

শ্রীলংঙ্কা ভ্রমণ-১ [ Travel to Sri Lanka-1]

   শ্রীলংঙ্কা ভ্রমণ-১ [ Travel to Sri Lanka-1] শ্রীলংঙ্কা ভ্রমণ-১ [ Travel to Sri Lanka-1] : দক্ষিণ এশিয়ায় আলোচিত দেশগুলোর একটি শ্রীলংঙ্কা।...