দার্জিলিং ভ্রমণ (পর্ব : তেরো) লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
দার্জিলিং ভ্রমণ (পর্ব : তেরো) লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

বুধবার, ৪ আগস্ট, ২০২১

দার্জিলিং ভ্রমণ (পর্ব : তেরো)

 



 

দার্জিলিং ভ্রমণ (পর্ব : তেরো)

ইয়াসমিন হোসেন

ফিরে চলা :

সন্ধ্যারাতের মধ্যে কেনাকাটাসহ বাইরের সব কাজ শেষ করার পর শুরু হলো বিদায়ের প্রস্তুতি টিভি খুলে বাংলাদেশের পরিস্থিতি জানার চেষ্টা করছিলাম কিন্তু এখানকার ডিশ লাইনে বাংলাদেশের কোন চ্যানেল নেই হিন্দি এবং ইংরেজি চ্যানেল থাকলেও খবর জানার মত চ্যানেল কম বাংলা চ্যানেল রয়েছে, কিন্তু তা শুধু ভারত এবং তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জিকে নিয়ে ব্যস্ত

রাতেই লাগেজ গুছিয়ে সকাল বেলার জন্য তৈরি করে রাখলাম আমাদের দুজনের দুই লাগেজের সঙ্গে যোগ হয়েছে কোনাকাটা করা আরও একটি বড় ব্যাগ শিলিগুড়ির অঞ্জলী লজে ফোন করে রুম বুক করে ফেললাম

পরদিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে আমরা হোটেল ছাড়লাম জিপে সামনের আসনে আগেই বুকিং দিয়ে রেখেছিলাম হোটেলের পাশে এদের লোকজন ছিল তাদেরকে সময় এবং আসনের কথা বলে রেখেছিলাম সময়মতো ওরাই আমাদের ডেকে নিয়েছে সোয়া ১০টার দিকে রওনা হলো আমাদের জিপ

আসার সময় ভূ-পৃষ্ঠ থেকে উপরের দিকে উঠেছি এবার উপর থেকে নিচের দিকে নামতে হচ্ছে জিপের পাশেই দেখতে পাচ্ছিলাম পাহাড়ের গা বেয়ে প্রায় খাঁড়াভাবে নেমে গেছে ট্রেইলের মতো যাত্রাপথ দেখে আঁতকে উঠতে হচ্ছিল একটা সুরসুরিমতো অনুভূতিও হচ্ছিল এসব পথ অবশ্য সোজা নয়, S-এর মতো বেঁকে গেছে মজার ব্যাপার হলো, জিপ থেকে যখন তাকিয়ে এই পথ দেখছি তখন একেবারে খাঁড়া নিচের দিকে নেমে যাওয়া দেখা গেলেও জিপ এগিয়ে যাবার পর সামনের দিকটা মোটেও নিচু বা খাঁড়া মনে হচ্ছিল না স্রেফ স্বাভাবিক রাস্তা মনে হচ্ছিল আসলে বাইরে না তাকালে কেও বুঝতেই পারবেন না যেÑ উপর থেকে নিচে নামা হচ্ছে এটা নির্মাণের অসাধারণ কৃতিত্ব বটে

এর আগে শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং শহরে প্রবেশ করতে আমাদের লেগেছিল প্রায় তিন ঘণ্টা কিন্তু নামার সময় দুঘণ্টাও লাগলো না ভিন্ন পথ দিয়ে আসা হলো কিনা বুঝতে পারলাম না হুশ করে আমরা প্রবেশ করলাম শিলিগুড়ির শহর এলাকায়

এরপর জিপ থেকে নেমে আগের মতো গুরুদুয়ারার অঞ্জলী লজে যাবার জন্য রিকশা নিলাম আমাদের গায়ে তখনও শীতের পোশাক অথচ শিলিগুড়িতে বেশ গরম রাস্তার মধ্যে পোশাক খুলে ফেলার ইচ্ছে ছিল না তাছাড়া শীতের রাজ্যে থাকতে থাকতে শরীরের ভেতর শীতটা এমনভাবে জেঁকে বসেছিল যেÑ মনেই হচ্ছিল না গরম

হোটেলে এসে জানলাম আমাদের জন্য রুম রাখা হয়েছে ঠিকইÑ কিন্তু ফাঁকা না থাকায় এসি রুম হয়েছে ভাড়া সাড়ে ৮শ টাকা উঠে পড়লাম রুমে এখানে একটাই তৃপ্তিÑ তা হলো সবই পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন, আরামদায়ক এবং পারিবারিক পরিবেশের মতো

 

শেষ বেলার বেড়ানো :

শেষ বেলায় কিছু কেনাকাটা এবং বেড়ানোর কাজ ছিল শিলিগুড়িতে  আপনি বদলে তুমি বলে সম্বোধন করা হয়Ñ সেটা ভুলেই গিয়েছিলাম ভুলে যাওয়ার অবশ্য কিছু কারণ ছিল বিদেশি বলে জানলে এখানকার লোকজন আপনি বলে সম্বোধন করে খুব বেশি সম্পর্ক তৈরি না হলে তুমি তে নামে না হোটেল অঞ্জলী লজের ম্যানেজার থেকে কর্মচারিরা জানতোই আমরা বিদেশিÑ তাই তারা আপনি করে বলায় তুমি কথাটা ভুলে গিয়েছিলাম

রাতের বেলা রুম থেকে নিচে নেমে হোটেল ভবনের ডানপাশ সংলগ্ন ফাস্ট ফুডের স্টলে কেনাকাটার সময় দোকানীর সঙ্গে ভাল আলাপ জমিয়ে ফেলেছিলাম তখন দোকানী এক পর্যায়ে তুমি তে নেমে এসেছিলেন মজার ব্যাপার হলো, দোকানী অর্থাৎ যিনি দোকানের গদিওয়ালা চেয়ারে বসেছিলেন তাকেই মালিক বলে ভুল করা হয়েছিল কথায় কথায় যখন দোকানী সামনের টুলে বসা একজনকে দেখিয়ে বললেন, উনিই হলেন এই স্টল, হোটেল এবং রেস্টুরেন্টের মালিক অবাক হয়ে বলি, কী বলেন, অ্যাতো বিশাল হোটেলের মালিক উনি! আর উনিই বসে আছেন টুলে! আপনি কর্মচারি হয়ে গদিতে! দেখে তো মনে হচ্ছে উনিই কর্মচারি এরকম আমাদের দেশে ভাবাই যায় না বলেছিলাম, আমাদের দেশে কর্মচারিদেরকে সবসময় মালিকরা নিচু চোখে দেখেন মালিকের উপস্থিতিতে কর্মচারি কখনই গদিতে থাকতে পারেন না

এসব নানা আলাপে আলাপে মালিক নিজেও আমার সঙ্গে বাংলাদেশ ভারতের নানা বিষয় নিয়ে আলাপ জমিয়ে ফেলেছিলেন পরে হোটেলের ম্যানেজার খোকন সাহাও আলাপ জমিয়ে একেবারে আপনজনের মতো কথা বলছিলেন মালিক যখন ছিলেন না তখন ম্যানেজার আরও নানা বিষয় খোলামেলাভাবে তুলে ধরেছিলেন ভারত-কলকাতা এবং শিলিগুড়ির জীবনযাপনের পার্থক্য, এখানকার আচার-আচরণ, নিয়ম-শৃঙ্খলা, মানুষের সামাজিক অবস্থান, রাজনীতিÑ এমনকি ম্যানেজার তার পরিবারের খুঁটিনাটি নিয়েও কথা বলছিলেন কথায় কথায় তিনি অঞ্জলী লজের সু² নিরাপত্তার বিষয়ও জানান বলেন, রুমগুলো বাদে সর্বত্র ছোট্ট ছোট্ট সিসি ক্যামেরা বসানো আছে গোটা হোটেলের সমস্ত কিছু রেকর্ড হয়ে যাচ্ছে ফলে এখানে কোন অনিয়ম হবার উপায় নেই

শিলিগুড়ির ওষুধের দোকানগুলোতে চাইলেই ওষুধ দেয়া হয় না এজন্য ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র দেখাতে হয় এটাই আইন, আইন অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে হয় আর আমাদের দেশে আইন থাকলেও তার ভাগও কার্যকর নয় চাইলেই যে কোন ওষুধের দোকান থেকে যে কোন ওষুধ কেনা যায় জানলাম, গোটা ভারতে চিকিৎসার চরিত্রটিই রকম যে কারণে বাংলাদেশের রোগীরা দেশ ছেড়ে এখানে চিকিৎসা নিতে আসেন আরও জানলাম, ভারতের তৈরি ওষুধগুলোও সম্পূর্ণ নির্ভরযোগ্য লোক ঠকানো ওষুধ এখানে মেলে না

জানলামÑ এখানকার কোন জিনিসপত্রে ভেজাল নেই, ফরমালিন নেই, কেমিকেল নেই, দেহের জন্য ক্ষতিকর কোন কিছুই নেই কারণ ধরণের কান্ড করা মানুষের চিন্তা-চেতনা বা নীতিবোধেই নেই একেবারেই ফ্রেশ জিনিস মেলে এখানে থেকেও বোঝা যায়, একটা সমাজ কতোটুকু সুস্থ হলে এসব বিষয়গুলো গুরুত্ব পায় কিন্তু আমরা কতো হতভাগাÑ ভাবতেও শিউরে উঠতে হয়

শিলিগুড়ির বিধান মার্কেটের ফুটপাতে নানা ফলমূলের জুস বিক্রি করতে দেখছিলাম লাল, নীল, হলুদ, বেগুনি, সাদা, কালো মিলিয়ে নানা রংয়ের জুস ফুটপাতের এক সিঙারার দোকানে বড় বড় সিঙারা বানাতে দেখে দাঁড়িয়ে পড়েছিলাম টাকা করে দাম নিলো দুটো সিঙারা খেয়ে পেট ভরে গেল আর খেতেও দারুণ পরিমানমত লবণ-ঝাল তো ছিলই, তেলটাও একেবারে খাঁটি আমাদের দেশের মতো পোড়া মবিল মেশানো নয় সিঙারায় ছিল নারিকেলের কুঁচি অসাধারণ স্বাদ

মার্কেটের এক জুতার দোকানে প্রথম টের পেলাম তুমি বলার বিষয়টি একটা ২৪/২৫ বছর বয়সের তরুণ দোকানী আমাকে তুমি বলে সম্বোধন করছিল ওই তরুণের তুমি ভেতর এমন একটা মাধুর্য ছিলÑ কিছুতেই রাগ করার উপায় ছিল না একেবারে নিজের পরিবারের আপনদেরকে যেভাবেতুমি ডাকা হয় সেভাবে সে তুমি বলছে পরে মনে হলো, এখানে তুমি বলেই সম্বোধন করার কথাটি বিষয়টি টেনে আনছি এই কারণে যেÑ তুমি ডাকের ভেতরও যে এতো পবিত্রতা, মাধুর্য এবং আপন করে নেবার টান থাকেÑ আগে কখনও বুঝিনি এরকম তুমি কে স্যালুট না করে উপায় নেই

শিলিগুড়িতে আমাদের কাজ শেষ হয়ে এসেছিল অপেক্ষা করছিল বিদায়ের পর্ব আগের রাতে বাংলাদেশের খবর জানার জন্য টিভি খুলতেই দেখলাম, জামাত-শিবির এবং বিএনপির হরতালে অনবরত জ্বালাও-পোড়াও চলছেই প্রায় প্রতিদিনই হরতাল ডেকে দেশকে সন্ত্রাসের নরকরাষ্ট্রে পরিণত করা হচ্ছে প্রতিদিনই দুই থেকে জনা দশেক করে মানুষ নিহত হচ্ছেন দেশে ফিরতে হবেÑ কিন্তু কোন্ দেশ? এই কি আমরা চেয়েছিলাম? গোটা দেশের মানুষ চরম আত্মত্যাগ করে, ৩০ লাখ মানুষ জীবন দিয়ে, প্রায় লাখ নারী সম্ভ্রম বিসর্জন দিয়ে যে স্বাধীনতা এবং শান্তির জন্য আতœত্যাগ করেছিলেনÑ এই কি তার পরিণতি? কে ভেবেছিল মাত্র ৪২ বছরেই সেই পরাজিত হায়েনারা ফের বিষ নি:স্বাসে অস্থির করে তুলবে এই দেশকে!

বার বার ফোন করে জানতে হচ্ছিলÑ আগামীকালও হরতাল আছে কিনা? হরতার থাকলে তো ফিরতে পারবো না কারণ সীমান্ত পার হয়ে কোন গাড়ি পাবো না জ্বালিয়ে দেয়ার ভয়ে কেও গাড়ি ছাড়বে না সুতরাং খবর দেখে এবং ফোন করে করে জেনে নিতে হচ্ছিল হরতাল থাকছে কি থাকছে না

 

----------- চলবে ----------

সৌদি আরবের পথ [The way to Saudi Arabia]

       সৌদি আরবের পথ [The way to Saudi Arabia] The way to Saudi Arabia [সৌদি আরবের পথ] : This short documentary is compiled from video foot...