দার্জিলিং ভ্রমণ (পর্ব : দুই) লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
দার্জিলিং ভ্রমণ (পর্ব : দুই) লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

বুধবার, ২ জুন, ২০২১

দার্জিলিং ভ্রমণ (পর্ব : দুই)


                                                                             শিলিগুড়িতে

 

দার্জিলিং ভ্রমণ (পর্ব : দুই)

-       ইয়াসমিন হোসেন

 

শিলিগুড়ি :

শিলিগুড়ি হলো বাংলাদেশ, নেপাল এবং চীনে যাতায়াতের গেটওয়ে শিলিগুড়ির সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে বাংলাদেশ, নেপাল চীনের ছাড়াও এখান থেকে ভুটানসহ দার্জিলিং, গ্যাংটক, কালিমপং, সিকিমে যাওয়া যায় এজন্য সড়ক রেলপথ রয়েছে ফলে বেশ ব্যস্ত শহর এটি লোকসংখ্যার দিক থেকে কলকাতার পরেই এর স্থান এজন্য বলা হয় শিলিগুড়ি পশ্চিমবঙ্গের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর

এখানে বসবাস করে বাঙালি, মারোয়ারী, পাঞ্জাবি, বিহারী, গুর্খা সম্প্রদায়ের লোকজন মূলত এখানকার মানুষ কথা বলেন বাংলা, হিন্দি এবং মারোয়ারী ভাষায় প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং নানান পূরাকীর্তি শোভিত শিলিগুড়ির আবহাওয়াও চমৎকার যেমন এই সময় জেলা শহর দার্জিলিংয়ে গরমকাল হলেও আমাদের জন্য প্রচন্ড শীতের অঞ্চল এখন দার্জিলিংয়ে গড়ে তাপমাত্রা থেকে ডিগ্রি সেলসিয়াস সে ক্ষেত্রে শিলিগুড়িতে না শীত না গরম ঠিক একই আবহাওয়া সীমান্তের এপার লালমনিরহাট-হাতিবান্ধায়ও না শীত না গরমকাল এসব জায়গায়, যখন কিনা বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় প্রচন্ড গরমে টিকে থাকা কঠিন

আমরা যখন শিলিগুড়ি পৌঁছালাম তখন ঘড়িতে বাজে ভারতীয় সময় দুপুর ১টা টার্মিনালে বাস থামলো তেমন একটা লোকজনের ভিড় ছিল না আমাদের দেশের মতো হাকডাক-মালামাল নিয়ে টানাহেঁচড়াও ছিল না একেবারেই নিরিবিলিভাবে বাস থেকে নেমে লাগেজ নিয়ে টার্মিনালের বারান্দায় দাঁড়ালাম আমাদের হোটেল অঞ্জলী লজ-এর অবস্থানটা কোথায় জানার জন্য মোবাইলে ফোন বের করলাম রিং করে জিজ্ঞাসা করতেই জানানো হলো, রিকশাওয়ালাকে বলতে হবে গুরুদুয়ারা যেতে হবে, ভাড়া নেবে ১০ টাকা সেইমতো একটু এগিয়ে গিয়ে রিকশা ডাকলাম বললাম, গুরুদুয়ারায় অঞ্জলী লজ হোটেলে যাবো ১০ টাকা ভাড়া চাইলো উঠে পড়লাম

দুপুর বেলা বলে হয়তো শহর অনেকটাই ফাকা রাস্তাঘাটে অল্প গাড়ি চলছে বেশিরভাগ চলছে মটর সাইকেল রিকশাওয়ালা প্রধান রাস্তা দিয়ে বেশ ধীরে এগিয়ে চললো কিছুদূর যাবার পর রিকশা বামের গলিপথ ধরলো আমার ভেতর একটা শঙ্কা কাজ করছিলÑ এমন একটা ফাঁকা গলিতে রিকশা ঢুকলো, ছিনতাই-টিনতাইয়ের কবলে না পড়ি, কোন কিছু তো চিনি না এক ফাঁকে রিকশাওয়ালাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনি অঞ্জলী লজ চেনেন তো? না চিনলে বলুন রিকশাওয়ালা কিছু না বলে মাথা ঝাকালো এতে আরও শঙ্কা বেড়ে গেল এদিক-ওদিক তাকিয়ে দেখলাম সাইনবোর্ডে লেখা আছেÑ গুরুদুয়ারা, সেবক রোড আর একটু এগিয়ে ডানে মোড় নিতেই উঁচু পথ এগুতেই বিরাট এবং অত্যাধুনিক হোটেল অঞ্জলী লজ দেখতে পেলাম প্রথমে ভেবেছিলাম ছোটখাটো বাঙালিআনা কোন সাধারণ হোটেল হবে নামটাও ওই রকম কিন্তু এটা দেখে চমকে গেলাম রিকশাওয়ালা বললো, এসে গেছি

 

হোটেল অঞ্জলী লজ :

আমাদের রুম ছিল দোতলায় নম্বর ১০৮ ডাবল বেড, ভারতীয় ৬শ টাকা ভাড়া রিসিপশনে যেতেই অভ্যর্থনা জানালেন ম্যানেজার বাংলায় কথা শুরু করলাম তিনি এন্ট্রিখাতা এগিয়ে দিয়ে পূরণ করতে অনুরোধ করলেন ইংরেজি লেখা দেখে প্রশ্ন করলাম, বাংলায় লেখা যাবে কিনা? ম্যানেজার হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লেন কিন্তু পূরণ করতে গিয়ে দেখলাম অনেক কিছুই বাংলায় লেখা সমস্যা যেমন পাসপোর্ট নম্বর, ইংরেজি নামের বানানÑ ইত্যাদি বাধ্য হয়ে কিছু জায়গায় বাংলা এবং কিছু জায়গায় ইংরেজি হরফে পূরণ করলাম এরপর পাসপোর্ট চাওয়া হলো Ñ জেরক্স করার জন্য ভাগ্যিসÑ জেরক্স (Xerox) করার বিষয়টি আগেই জেনে এসেছিলাম আমাদের দেশের ফটোস্ট্যাটকে ভারতে বিশেষ করে শিলিগুড়িতে জেরক্স বলা হয় এখানে সারাদিন ঘুরেও জেরক্স না বলে ফটোস্ট্যাট বললে কোন ফল পাওয়া যাবে না কারণ ফটোস্ট্যাট মানেই জানে না এখানকার কেও

যাইহোক, পাসপোর্ট দিতেই বেয়ারাকে দিয়ে জেরক্স করার জন্য পাঠানো হলো আমি ভেবেছিলাম হয়তো কাজটা আমাদেরই করে দিতে হবে কিন্তু না, একটু অপেক্ষা করতেই পাসপোর্ট ফেরত দিয়ে জেরক্স কপি রেখে দিলেন ম্যানেজার বললেন, আপনারা বাংলাদেশ থেকে এসেছেন, সেই সঙ্গে সাংবাদিক তাই গোয়েন্দা দফতরে এসব এখনই পাঠাতে হবে বুঝতে পারলাম পদে পদে তথ্য রাখা হচ্ছে আমাদের হোটেল ম্যানেজার পাশের দিকটা দেখিয়ে বললেন, ওটাই অঞ্জলী লজের খাবার রেস্টুরেন্ট রুম থেকে ফোন করেও খাবার নিতে পারবো, আবার রেস্টুরেন্টে এসেও খেতে পারবো দেখলাম চমৎকার এবং অত্যাধুনিক রেস্টুরেন্ট আমাদের জন্য এই মুহূর্তে প্রয়োজন ফ্রেশ হওয়া অবশ্য ক্ষুধায় পেটও জ্বলছিল ভাবলাম আগে রুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে সামান্য বিশ্রাম নেবো। তারপর নেমে এসে লাঞ্চ করবো

রুমে চলে এলাম ভিতরে ঢুকেই মনটা তৃপ্তিতে ভরে উঠলো ধবধবে সাদা বেড, মোটা গদির ওপর বিছানা মোটা মোটা দুটো পরিস্কার পরিচ্ছন্ন লোমশ কম্বল সুন্দর দুটো বালিশ ওয়ারড্রোব, টেবিল, সোফাসেটের মতো দুটো গদিওয়ালা চমৎকার চেয়ার, টিভি, এটাচ্ড বাথÑ সব মিলিয়ে অসাধারণ বিছানার ওপর রাখা আছে একটা নতুন সাবান এবং মশা তাড়ানোর ম্যাট বাথরুমে ঠান্ডা এবং গরম পানির দুই ব্যবস্থাই আছে এসব পেয়ে আমাদের অর্ধেক ক্লান্তি এমনিতেই দূর হয়ে গেল

ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে এলাম সুসজ্জিত রেস্টুরেন্টে ঢুকে সাদা ভাত এবং তিন পদের সবজি তরকারি চাইলাম সবকিছু দারুণ পরিচ্ছন্ন হওয়ায় তৃপ্তির সঙ্গে ভোজন করতে পারলাম খাবারের বিল এলো দেড় টাকার মতো এরপর ম্যানেজারের সঙ্গে টুকরো কথাবার্তা সেড়ে নিলাম রুম ভাড়া এখনই দেবো কিনা, বেড়ানোর জায়গা কোথায়, মার্কেটে যেতে হবে কোন্ পথেÑ ইত্যাদি জেনে নিলাম তাকে বললাম, আমরা আগামীকাল ভোর বেলা দার্জিলিংয়ের পথে চলে যাবো ম্যানেজার জানালেন, তাদের লোকই রিকশা ঠিক করে দেবে কোন সমস্যা হবে না

 

------------ চলবে ----------