করোনাকালের
আগের কথা। আমাদের থাইল্যান্ড যাত্রার দিন ছিল ৩০ সেপ্টেম্বর। বিমানরিজেন্ট
এয়ার। ছাড়ার সময় ছিল সকাল ৯টা ২০ মিনিট। তারমানে
ইমিগ্রেশন, চেক ইত্যাদির কাজ শেষ করতে তিন ঘণ্টা আগে এয়ারপোর্টে পৌছাতে হয়েছিল।
সঙ্গে
নিয়েছি দু'জন (স্বামী)
মিলে একটা বড় ট্রাভেল ব্যাগ।
কাপড়চোপড় দিয়ে ১৪/১৫ কেজি
ওজন। যদিও হাতব্যাগে ৭ কেজি ৭
কেজি করে ১৪ কেজির অনুমোদন
ছিল। আসলে হাতব্যাগে তো অনেক জিনিসই
নেওয়া যায় না। সুতরাং ক্যামেরা, মোবাইল জাতীয় জিনিস ছাড়া আর কিছু নেওয়ার
ছিল না।
আমরা
ঠিক ৬টার দিকে এয়ারপোর্টে পৌছে পৌছেছিলাম। নিয়ম অনুযায়ী, ইন্টারন্যাশনাল লবিতে (হযরত শাহজালাল বিমান বন্দরের দ্বিতীয় তলা) প্রবেশ করতে পাসপোর্ট-ভিসা-বিমান টিকেট দেখাতে হয়। এগুলো আমরা হাতেই রেখেছিলাম। দেখিয়ে ঢুকে পড়লাম। পরে বুঝলাম বেশ আগে এসে গেছি। এয়ারের কাউন্টার খোলেইনি। সুতরাং বসার জায়গায় বসে বসে স্ক্রিনে দেখতে হচ্ছিল আমাদের ফ্লাইট নম্বর, বোর্ডিং পাশ গ্রহণের সময়, ইমিগ্রেশনের গেট নম্বর, তারপর চেকিংয়ের গেট নম্বর ইত্যাদি। সবশেষে টাঙানো স্ক্রিনেই দেখতে হয় বিমানে ওঠার
গেট নম্বর।
আমরা গেটম্যানের কাছ থেকে বোর্ডি ¯স্লিপ নিয়ে সেটা পূরণ করলাম। যাতে নাম, এনআইডি, পাসপোর্ট নম্বর, মেয়াদের তারিখ, গন্তব্যের ভিসা নম্বর, মেয়াদের তারিখসহ বেশ কিছু তথ্য লিখতে হয়। আমরা আগেভাগেই লিখে তৈরি করে রাখলাম।
বিমানের
কাউন্টার খুলতে খুলতে সাড়ে ৭টা বাজিয়ে দিলো। লাগেজ জমা দিয়ে পাস এবং বিমানের সিট নম্বরসহ আরেক জোড়া টিকেট (যাকে বলা হয় বোর্ডিং পাস)
নিয়ে ইমিগ্রেশন কেন্দ্রে ঢুকলাম। সেখানে পাসপোর্ট নিয়ে কম্পিউটারে পরীক্ষা করে, হাতের ছাপ রাখার পর ছেড়ে দিলো।
তারপর অপেক্ষা চেকিংয়ের। আধা ঘণ্টা পর চেকিংও শেষ
হলো। এবার দরকার, বিমানে ওঠার গেট নম্বর পাওয়া। স্ক্রিনে ওটা দেখার জন্য আরও ঘণ্টাখানেক বসে থাকতে হলো। শেষে গেট পেরিয়ে নিচতলায় যাওয়া। সেখান থেকে চমৎকার বাসে করে বিমানের দোরগোড়ায় নামা, বিমানে উঠে সিটে বসা- এই ছিল কাজ।
রিজেন্ট
এয়ারে উঠে সস্তা বিমানের তিন অবস্থা দেখতে হলো। প্রচন্ড গরম। এসি কাজ করছে না। কিছুক্ষণের মধ্যে ঘেমে দম বন্ধ হওয়ার
অবস্থা হলো। কয়েকজন যাত্রী চিৎকার চেচামেচি শুরু করলেন। স্টুয়ার্ড আসতেই তারা প্রশ্ন করলেন, এসি কাজ করছে না কেন? ওই
বেচারা জবাব দিলো, মূল ইঞ্জিন চালু হলে ঠান্ডা বেরুবে। তারপর মূল ইঞ্জিন চালু হওয়ার পর বিমান যখন
আকাশে উড়লো তখনও একই অবস্থা। এসি কোন কাজই করছে না। যাত্রীদের কেউ কেউ স্টুয়ার্ড, এয়ার হোস্টেজদের গালাগালি শুরু করলেন। বললেন, আমরা অনেক বিমানে চরেছি, কিন্তু এই অবস্থা দেখিনি।
এসি কাজ করে না-এটা কোন
কথা হলো? গরমে শেষ হয়ে যেতে হচ্ছে, দম ফেলা যাচ্ছে
না।
বিমান
চট্টগ্রামে অল্প সময়ের জন্য ল্যান্ড করে যাত্রী ওঠানো-নামানো করলো। তারপর আবার আকাশে উঠলো। এর মধ্যে এক
দফা হালকা নাস্তা দেওয়া হয়েছে। পরের দফায় লাঞ্চ দেওয়া হলো। প্রায় ঘণ্টা দুয়েক পর বিমানের এসি
স্বাভাবিক হলো। তখন বেশ ঠান্ডা মিললো।
আমরা ঘড়ি দেখছিলাম। হিসাব অনুযায়ী, ৯টা ২০ মিনিটের বিমান ব্যাংককে ল্যান্ড করবে ওই দেশের সময় ১টা ৫০ মিনিটে। ওদের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য এক ঘণ্টা। অর্থাৎ ওদের ১টা ৫০ মানে আমাদের দেশের সময় ১২টা ৫০। প্রায় তিন ঘণ্টার যাত্রা। এরমধ্যে পূরণ করার জন্য এয়ার হোস্টেজ থাই ইমিগ্রেশন ব্যুরোর ডিপারেচার কার্ড দিয়ে গেল। আমরা পূরণ করলাম। এতেও নাম, বয়স, জাতীয়তা, পাসপোর্ট নম্বর, ফ্লাইট নম্বর উল্লেখ করে নিচে সই করতে হয়। আগেভাগে কাজগুলো শেষ করে ঝামেলা মুক্ত থাকলাম।
আমি
বসেছিলাম বাম পাশে জানালার ধারে, আর স্বামী বেচারা
মাঝখানের সিটে। একেবারে ডান পাশে কামাল নামে এক ব্যবসায়ী। পুরান
ঢাকায় বাড়ি, মাঝে মধ্যেই ব্যাংকক যান। তারসঙ্গে পরিচয় হয়ে ভাল হলো। কারণ আমরা থাইল্যান্ডে নানা তথ্য জানতে পারলাম। তাছাড়া এয়ারপোর্টে নামার পর তার সহযোগিতাও
পাবো। তিনি আসা-যাওয়া করায় থাই ভাষা বোঝেন এবং বলতে পারেন, যার আমরা কিছুই পারি না। তিনিই জানালেন, ব্যাংককের কেউ ইংরেজি ভাল বোঝে না, বলতেও পারে না। ওরা নিজেদের ভাষায় দক্ষ। আরও জানলাম, ব্যাংকক পুরো খোলামেলা এবং আনন্দ উৎসবের নগরী। মানুষের আচার-আচরণ এতো ভাল যা কল্পনাই করতে
পারবো না। তাছাড়া থাই সরকার ট্যুরিস্টদের এতো বেশি সম্মানের জায়গায় রেখেছে যে, কোথাও কেউ কোন সমস্যা করবে না। বলা যায় ট্যুরিস্টদের স্বর্গরাজ্য ব্যাংকক।
যথাসময়ে ব্যাংকের আকাশে ঢুকে পড়লাম। বিমান ক্রমেই নিচে নামছে। দেখতে পাচ্ছি নানা রঙের বাড়ি-ঘর-দালান-কোঠার সারি। বিমান আরও নিচে নেমে এলো। স্পষ্ট হয়ে উঠলো বিমান বন্দর সুবর্ণভ‚মি এয়ারপোর্ট, যাকে সংক্ষেপে ‘বিকেকে’ বলা হয়। সুবর্ণভ‚মি বাংলা শব্দ। কী করে হলো? আগেই জেনেছিলাম, এখানে কোথাও অতীত যুগে সুবর্ণ রাজ্য নামে রাজাদের একটা রাজ্য ছিল। সেই স্মৃতি ধরে রাখতেই নাম রাখা হয়েছে সুবর্ণভ‚মি। এই এয়ারপোর্ট বিখ্যাত পোর্টগুলোর একটি। বিশাল এলাকা নিয়ে নয়নাভিরাম এয়ারপোর্ট। নামের সঙ্গে রয়েছে এর দারুণ মিল।
মাটি
স্পর্শ করলো বিমান। টেকঅফ করার পর লম্বা পথ
অতিক্রম করে জায়গামত স্থির হলো। কিছুক্ষণ পর যাত্রীরা যে
যার মতো নামতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। আমরাও সারিবদ্ধভাবে বেরিয়ে এলাম। ঠিক ঢাকার মতো আমাদের গাড়িতে করে ইমিগ্রেশন ভবনের গেটে নামিয়ে দেওয়া হলো।
শুনেছিলাম
ইমিগ্রেশনে নাকি অনেক ঝামেলা করা হয়। কিন্তু এর কিছুই হলো
না। কয়েকশ মানুষের সঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়ে ইমিগ্রেশনে দাঁড়ালাম। তেমন কিছু জিজ্ঞাসা করা হয়নি। কদিন থাকবো- এটাই শুধু জানতে চেয়েছিল। তারপর আঙ্গুলের ছাপ নিয়ে কাজ শেষ করে ফেললো। এখান থেকে লাগেজ নেওয়ার জন্য ঘুরন্ত লবির দিকে খেয়াল করছিলাম। কিন্তু সবার লাগেজ এলেও আমাদেরটা আসছিল না। বেশ চিন্তায় পড়ে যাচ্ছিলাম। শেষে খেয়াল করে দেখি, আমাদের লাগেজ কারা যেন লবিতে নামিয়ে রেখেছে আরও কয়েকটির সঙ্গে। নিয়ে নিলাম ওটা।
এরপর লম্বা কড়িডোর ধরে চলা। এয়ারপোর্টের রকমারি দোকানপাট ঝকঝক করছিল। বহু ক্রেতার আনাগোনা। আমরা ওসবে নজর না দিয়ে ভাবছিলাম- এখন কী করবো? আমাদের কাছে একটা কন্ট্রাক্ট পারসনের নাম এবং মোবাইল নম্বর দেওয়া ছিল। কিন্তু সেটার সঙ্গে সংযোগ করতে হলে এখানকার মোবাইল সিম দরকার। খেয়াল করে দেখলাম অনেকগুলো কাউন্টার সামনেই। কয়েকটিতে অনেক ভিড়। একটাতে গিয়ে সিম চাইলাম। ইংরেজিতে বললাম। ওরা কী বুঝলো কে জানে। কয়েকবার করে ইশারা ইঙ্গিতে আমাদের প্রয়োজনের বিষয়টি বলার পর কাউন্টারের অল্প বয়সী মেয়েগুলো বুঝতে পারলো। বেশ বেশি টাকা দিয়েই সিম নিতে হলো। তারপর ফোন করলাম কন্ট্রাক্ট নম্বরের জনৈক আরিফের সঙ্গে। কয়েকবার চেষ্টা করে সংযোগ পেলাম না। বাধ্য হয়ে ঢাকায় ফোন করে সমস্যা জানালাম। ওখান থেকে জানানো হলো, একটু পর আরিফ নিজেই আমাদের নম্বরে যোগাযোগ করবে। এর বেশ কিছু পর আরিফ ফোন করলেন। জানালেন, আমাদের জন্য ট্যাক্সিসহ ডাইভার উপস্থিত আছে। তারসঙ্গে যোগাযোগের একটা নম্বর দিলেন। সে অনুযায়ী ফোন করলাম। ধরলেন এক মহিলা। তিনি কী বললেন কিছুই বুঝতে পারলাম না। এসব করতে করতে এগুচ্ছিলাম বেরুনোর গেটের দিকে। সঙ্গে ব্যবসায়ী ভদ্রলোক কামালও ছিলেন। তিনি বেশ সহযোগিতা করছিলেন। আমরা যখন এগুচ্ছিলাম তখন দেখছিলাম লাইন ধরে অনেকে দাঁড়িয়ে আছে। বুকে নাম লেখা কাগজ। কীসের কি- বুঝতে পারলাম না। কিন্তু ওর মধ্যেই যে আমাদের ড্রাইভার আমাদের নাম লেখা কাগজসহ দাঁড়িয়ে থাকবে- সেটা কেউ বলে দেয়নি। আমরা তাদের পার করে গেট দিয়ে বেরিয়ে এলাম। ড্রাইভারের সঙ্গে কথা বলার জন্য কামালকে ফোনটা দিলাম। তিনি কথা বলে ড্রাইভারকে বের করলেন। বেচারা লাইন থেকে বেরিয়ে এসে আমাদের পিকআপ করলেন। ইনি বয়স্ক এবং মহিলা। আমরা ট্যাক্সিতে উঠলাম। কামালকেও সঙ্গে নিলাম। কারণ তিনি এতোটা আমাদের সহযোগিতা করেছেন, ফেলে যাই কি করে!
স্বর্গরাজ্য থাইল্যান্ড
: সামরিক শাসনের দেশ। ঠিক আমাদের দেশের মতো এদেশেরও রয়েছে রাজনৈতিক সংগ্রামের নানা চড়াই-উৎরাই। রয়েছে ভিনদেশিদের শাসন-শোষণের ইতিহাস। আরও রয়েছে জনগণের বিজয়ের রক্তাক্ত ইতিহাস। তবে তারপরেও দেশটি সামরিক শাসকের নিয়ন্ত্রণে। ৫,১৩,১২০
বর্গকিলোমিটারের দেশটিতে জনসংখ্যা প্রায় সাত কোটি।
আমরা
মূল নগরী ব্যাংককের পথে এগুচ্ছিলাম। ট্যাক্সির চালক সেই মহিলা। তাঁর বাম পাশে অতিথি কামাল। পেছনের আসনে আমি আর আমার স্বামী।
ড্রাইভার আমাদের কাছ থেকে হোটেলের ঠিকানা নিয়েছিলেন। তারপর সেই ঠিকানা সার্চ করেছেন সঙ্গে থাকা ল্যাপটপে। তখন স্ক্রীনে ফুটে উঠেছে হোটেল রয়াল এশিয়া লজ-এ যাবার
পথ এবং যাবতীয় তথ্য। মহিলার সঙ্গে একটা ল্যাপটপ ছাড়াও আছে এন্ড্রুয়েড মোবাইল ফোন। বুঝতে পারছিলাম গোটা রাজধানী কম্পিউটারাইজড। বাটনে চাপলেই যা চাইবো তাই
জানা যাবে। ট্যাক্সি চলছিল, আর ল্যাপটপের ট্রাকারে
আমাদের যাত্রাপথ দেখাচ্ছিল। কোথা দিয়ে যেতে হবে সেটাও দেখা যাচ্ছিল। কোথায় জ্যাম, কোথায় ট্রাফিক ইত্যাদি সবকিছুই দেখা যচ্ছিল তাতে। সাধারণত আমাদের দেশে এন্ড্রুয়েড ফোনের ট্রাকারে যেমন দেখা যায়- তেমনটা।
সামনে,
মাথার উপরে, ডানে-বামে দেখছিলাম অত্যন্ত সুশৃঙ্খল বাড়ি-ঘর, রাস্তাঘাট, গাড়ি-ঘোড়া, দোকানপাট, মানুষজন আর ফ্লাইওভার। আমাদের
দেশের মতো ভিড়ভাট্টা নেই। সবকিছু চলছে যন্ত্রের মতো নিয়ম মেনে। রাস্তা-ঘাট বা দোকানপাটের পরিচ্ছন্নতা
দেখে বিস্মিত হতে হচ্ছিল। কোথাও কোন নোংরা-ময়লা নেই। সব যেন এইমাত্র
ধুয়ে-মুছে ঝকঝকে করা। মূল নগরীর মধ্যে যখন ঢুকে পড়লাম তখন মনে হচ্ছিল স্বপ্নের জগতে প্রবেশ করেছি। কী সুন্দর মানুষজন
চলাচল করছে! মেয়েদের পরনের সবই শর্টকাট। হাফপ্যান্ট আর উপরের অংশবিশেষ
ঢাকা। বাকিসক খোলামেলা। কিন্তু তাতে করে অশ্লীল মনে হচ্ছে না। বরং অদ্ভুত সুন্দর দেখাচ্ছে। তাছাড়া থাই নারীদের দৈহিক গড়ন ও চেহারা-সুরৎ
কল্পনার হুরপরিকেও হার মানায়। ছেলেদের গড়নও চমৎকার। সবাই সুস্বাস্থের অধিকারী। হাসি-খুঁশি।
মাঝে
মধ্যে জ্যামে পড়তে হচ্ছিল। যানবাহনগুলো বেশ ফাঁক ফাঁক করে এক লাইনে দাঁড়িয়ে
পড়ছিল। ট্রাফিক সিগন্যাল পড়তেই আবার সারিবদ্ধভাবে এগুচ্ছিল। কোন যানবাহনের ওভারটেক নেই, গা ঘেঁষে চলাচল
নেই। এমনকি কোন যানবাহন হর্নও ব্যবহার করে না। কারণ কম্পিউটারাইজড নগরীতে এসবের প্রয়োজন নেই। হর্ন বাজানোও নাকি নিষিদ্ধ।
বেশ কতগুলো সড়ক এবং অলিগলি পেরিয়ে আমাদের ট্যাক্সি হোটেলের পথে ঢুকে পড়লো। ড্রাইভার হয়তো একটু ভুল করেছিলেন। আমাদের হোটেলের জায়গায় না গিয়ে পাশের জায়গায় ঢুকে পড়েছিলেন। শেষে ল্যাপটপ চেক করতেই পথ বেরিয়ে গেল। ট্যাক্সি এসে থামলো রয়াল এশিয়া লজে।
বেশ
চমৎকার হোটেল। ম্যানেজারসহ কর্মচারিদের সবাই মহিলা। আমরা আমাদের রিজার্ভেশনের কাগজ দেখাতেই ম্যানেজার মহিলা ছয় তলার রুমে
যাওয়ার ব্যবস্থা করলেন। ড্রাইভার এবং কামালকে বিদায় দিয়ে আমরা লিফ্ট হয়ে রুমে ঢুকলাম। বয় আমাদেরকে সব
বুঝিয়ে দিলো। রুমটাও চমৎকার। থ্রি স্টার হোটেলে যা থাকে- তার
সবই আছে। দেয়ালের আলমিরায় বিয়ার, হুইস্কিসহ ড্রিংকসও সাজানো।
এমনিতেই
রাত হয়ে গিয়েছিল। আমরা তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হওয়ার দিকে মনোযোগ দিলাম। আধা ঘণ্টার মতো লাগলো দ’ুজনের তৈরি
হতে। একটু টেনশন করছিলাম। কারণ কি খাবো, কোথায়
খাবো- এটা একটা ব্যাপার ছিলো। তাছাড়া আমাদের সব কথা স্থানীয়দের
বুঝিয়ে বলাও মুস্কিল। তারা ভাল ইংরেজি বোঝে না। আবার আমরাও ওদের থাই ভাষা বুঝি না।
রুম
থেকে বেরিয়ে কাউন্টারে ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করলাম, রুমের স্মার্ট চাবি কার্ড জমা দিয়ে যেতে হবে কিনা। জবাব দিলো, জমা দিতে হবে না। আমরা হোটেল থেকে রাস্তায় চলে এলাম। মেইন রাস্তা বেশ দূরে। দেখা যায়, কিন্তু পায়ে হাঁটতে হবে। ঝকঝকে রাস্তা পুরো ফাঁকা। আশপাশের হোটেল রেস্তোরাগুলোতে আলোর ঝলকানি। আসনগুলোতে বসে নারী-পুরুষের দল। তারা কেউ খাচ্ছে, কেউ ড্রিংক করছে। স্টেজে প্রায় উদোম নারীরামাইক্রোফোনে নেচে নেচে গান গাইছে। কোনো রেস্তোরার সামনে ফুটপাত জুড়ে স্ট্রিট ফুড সাজানো। তারমধ্যে পোকা-মাকড়-কাঁকড়াসহ বিচিত্র প্রাণীই বেশি। ওগুলো থেকে বিদঘুটে গন্ধ বের হচ্ছে। কারণ ফ্রাই করে ওগুলো সাজানো হচ্ছিল।
একটু
হাঁটতে চাইছিলাম। মেইন রোডে এসে ডানে মোড় নিলাম। এগুতেই আরও বড় মেইন রোড
পেলাম। মাথার উপর ফ্লাইওভার। চারপাশে চোখ ধাঁধাঁনো দোকানপাট। ডান দিকে খানিকটা এগিয়ে একটা ফুটওভার ব্রিজ পেলাম। সেটা দিয়ে রাস্তা পেরুলাম। ওপারে এদিক সেদিক ঘুরতে গিয়েই কামাল ভদ্রলোকের দেখানো বাঙালি হোটেল চোখে পড়লো। ঠিক করলাম এই সুযোগে ডিনারের
কাজ সেরে ফেলাই ভাল।
রাধুনী
রেস্টুরেন্ট (১৩ সুকুমভিত রোড,
২ সুকুমভিত, ব্যাংকক- ১০১১০)। আমরা ঢুকে
খাবারের দাম জানলাম। হিসাব করে দেখলাম আমাদের দেশের চেয়ে সামান্য বেশি। আমাদের মূদ্রার হিসাবে এখানে প্রায় আড়াইগুন বেশি। অর্থাৎ আমাদের প্রায় আড়াই টাকা সমান এখানে এক বাথ। যা
দাম তারসঙ্গে আড়াইগুন করলেই আমাদের দেশের দাম বেরিয়ে পড়বে। আমরা ম্যানেজারের সঙ্গে আলাপ জমিয়ে ফেললাম। তাঁর অমায়িক ব্যবহারে প্রথমেই মুগ্ধ হতে হলো। তিনি আমাদের জন্য তাৎক্ষণিক পরোটাসহ যা যা চাইলাম-
তা গরম গরম তৈরি করে দিলেন। মুখে দিয়ে দারুণ তৃপ্তি পেলাম। খুব বেশি মানুষের ভিড় ছিল না। ম্যানেজার ইরশাদ ঘন ঘন এসে
আমাদের কিছু লাগবে কিনা- খোঁজ নিচ্ছিলেন। সবচেয়ে সুবিধা হচ্ছিল, তিনি বাংলাভাষী। পরে কথায় কথায় জানতে পারি, তিনি অন্তত ৬০টি ভাষায় কথা বলতে পারেন। উচ্চ শিক্ষিত। তাঁর দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ। তবে বাংলাদেশ জুড়ে তাঁর বহু স্বজন রয়েছে। ঢাকায় রয়েছে অনেক ব্যবসায়ী আত্মীয়। এও জানলাম, হোটেলের
মালিকও চট্টগ্রামের। ব্যাংককে বিয়ে করেছেন। মাঝে মধ্যে চট্টগ্রামে যান। তাঁর আরও অনেক ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান রয়েছে এখানে। প্রথম দিনের আলাপেই গভীর আন্তরিকতা তৈরি হয়ে গেল।
রেস্টুরেন্ট
থেকে বেরিয়ে ফুটপাত ভ্রমণ শুরু করলাম। প্রচন্ড গরম। আমাদের দেশের চাইতেও বেশি। সম্ভবত ৩৩-৩৪ ডিগ্রি
সেলসিয়াস চলছে। আমি বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়লাম। রাস্তায় দেখছিলাম একেবারে খোলামেলা পোশাকের নারীর ঢল। পথে পথে স্ট্রিট ফুডের স্টল, আমাদের দেশের ফুটপাত মার্কেটের মতো নানান জিনিসপত্রের পসরা। রঙিন আলোয় সবকিছুকে মনে হচ্ছিল স্বর্গীয়।
পরের দিন
: আমরা
এসেছি মাত্র দু’দিনের জন্য।হাতে
যে সময়টুকু ছিল তা মোটেও বেড়ানোর
জন্য যথেষ্ট নয়। বরং খুব সাংঘাতিকভাবে সংক্ষিপ্ত। আজ রাতে ব্যাংককে
এসেছি। কালকে সারাদিনটা পাবো। আবার ভোররাতেই মালয়েশিয়া যাওয়ার ফ্লাইট ধরবো। তার মানে বেড়ানোর দিন দু’দিন হলেও
বস্তুত একটা দিন মাত্র। সেই একটা দিন কালকে ‘হাফ ডে সিটি ট্যুর’
বলে একটা বেড়ানোর ব্যবস্থা আছে। এটা থাইল্যান্ডের সব হোটেলই থাকে।
চাইলে যে কোন জায়গায়
ইচ্ছেমত সময় কাটানো যায়। অবশ্য তারজন্য নির্দিষ্ট টাকা জমা দিতে হয়। সকাল ৯টায় আমাদের গাড়ি আসবে।
ঠিক
৯টায়ই গাড়ি এলো। আমরা আগেই তৈরি হয়েছিলাম। হোটেলেই ডিম-পরোটার নাস্তা করে নিয়েছিলাম। বুফেট সিস্টেমে ব্রেকফাস্ট। আমরা সব সেরে অপেক্ষা
করছিলাম। গাড়ি আসতেই উঠে পড়লাম। ড্রাইভাবের কথায় বুঝলাম, ঘণ্টা তিনেকের মত সময় শহর
ঘোরানো হবে।
নগরী
দেখছিলাম। সবকিছুই অসম্ভব সুন্দর। সব জায়গায় ফ্লাইওভার।
আমাদের দেশের ফ্লাইওভারের সঙ্গে মিলিয়ে দেখছিলাম আকাশ-পাতাল তফাৎ। এখানকার ফ্লাইওভার দেখে মনে হয় কতো ব্যক্তিত্বসম্পন্ন
এবং কতো ধনাঢ্য। তার উপর দিয়ে গাড়ি চলছে। মাটির নিচে পাতাল রেল তো আছেই। ফ্লাইওভার
দিয়েও মেট্রোরেল চলছে। এই দেশের ফ্লাওভারের
সঙ্গে আমাদের দেশের ফ্লাইওভার মেলাতে গেলে মনে হচ্ছিল- আমাদেরগুলো কতো দরিদ্র, হাড়জিরজিরে।
রাস্তাঘাটগুলো
আয়নার মতো ঝকঝকে। দুপাশের বাড়িঘর, বাজার, দোকান, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানগুলো চাকচিক্যে চোখ ধাঁধানো। আর পরিস্কার মসৃন
ফুটপাত দিয়ে চলছে অর্ধনগ্ন কিন্তু দারুণ মার্জিত নারী-পুরুষ। একমাত্র ভিডিও বা ছবিতে সবকিছু
এতো সুন্দর দেখা যায়। বাস্তব যে সেই ছবির
মতো হতে পারে- তা না দেখলে
বিশ^াস হতো না।
গাড়িতে
বসে নগরী ঘুরে আর কী দেখা
যায়! দ্রæত গাড়ি চলে,
আর দ্রæত সব পাশ
কাটিয়ে চলে যায়। আমাদের হাতে সময় নেই। সুতারাং ড্রাইভার আমাদের স্পট দেখার জায়গায় নামিয়ে দিলেন।
এটা হলো ‘দি গোল্ডেন মাউন্ট’, থাই ভাষায় যেটি ‘পু কো থং’ (ঠিকানা : Chakkraphatdiphong Road, Ban Bat, Pom Prap Sattru Phai,Bangkok, Thailand )এটা বৌদ্ধ রাজা আউথায়ার সময়ে (১৩৫০-১৭৬৭ খ্রিস্টাব্দ) রাজা রামাল্স (১৭৮২-১৮০৯ খ্রিস্টাব্দ)-এর করা বৌদ্ধ স্বর্ণ মন্দির। যাতে রয়েছে অসংখ্য স্বর্ণ-স্বেত এবং কষ্টি পাথরের মূর্তি ও কীর্তি। বিরাট এলাকা নিয়ে এই মাউন্ট। হাতে সময় কম বলে আমাদের দ্রæত সবকিছু দেখে নিতে হচ্ছিল।
প্রথমেই
আমরা একটা কারুকার্যময় বিরাট ভবন পেলাম। এর মাঝামাঝি মাথায়
উঁচু চোখা মিনারমতো। সেখান থেকে দুপাশটা ধরে মিনারের ধারাবাহিকতা নেমেছে নিচের দিকে। মাঝমাঝিতে প্রবেশ পথ। ভ‚মি থেকে
একটু উপরে।
দেখলাম অনেকেই ওই পথ দিয়ে
ভেতরে ঢুকছেন। জুতো বাইরে রেখে যাচ্ছেন। খুব পবিত্র এবং ভাগাম্ভির্যময় পরিবেশ। আমরা ভবনের সামনে কিছু ছবি তুলে জুতো খুলে ভেতরে ঢুকে পড়লাম। স্বর্ণ-স্বেত আর কষ্টি পাথরের
রাজকীয় বহু মূর্তি দিয়ে সাজানো অনেকগুলো কক্ষ। মেঝেতে লাল টকটকে গালিচা। বিশাল উঁচুতে ছাদ। অত্যন্ত পরিস্কার পরিচ্ছন্ন। দেওয়ালের মাঝ বরাবর শোভা পাচ্ছে দেবতা বুদ্ধুর বিরাট বিরাট স্বর্ণমূর্তি। একেকটার দৈর্ঘ না হলেও ১০/১২জন মানুষ সমান। ভ‚মি এবং
সিঁড়ির মতো ধাপ করা উঁচু বেদিগুলোতেও মূর্তি। এসবের উজ্জ্বল্য এতোটাই যে- বাইরের সামান্য আলোও প্রতিফলিত করে চারদিক ঝকমকে করে রেখেছে।
দেখছিলাম
দর্শনার্থীরা অত্যন্ত শ্রদ্ধাভরে মূর্তিগুলোকে পূজো করছিলেন, দুহাত জোড় করে নমস্কার জানাচ্ছিলেন। এই কাজগুলো শেষ
করে তারা ছবি তুলছিলেন। আমরাও যথাযথ শ্রদ্ধাবনত চিত্তে ছবি তুলছিলাম। একটা কক্ষে দেখলাম বেদিতে স্থাপিত বিস্তৃত মূর্তিমÐলিকে সামনে রেখে নামাজ পড়ার মতো করে বয়সীরা মেঝেতে বসে আছেন। মূর্তির সামনে বিভিন্ন ধরনের প্রসাদ। কয়েকজন সেবক সব কাজে সহযোগিতা
করছেন। আমরাও তাঁদের সঙ্গে কিছু সময় সঙ্গ দিয়ে আরও কয়েকটি কক্ষ পরিদর্শন করলাম। সবগুলো কক্ষেই নানা ধরনের দামি দামি মূর্তি বা মূর্তি মন্ডলি। মন্ডলি
বলছি এই কারণে যে,
একসঙ্গে অনেকগুলো মূর্তির সমাবেশ ঘটিয়ে একটি মূর্তি করা হয়েছে।
প্রধান ভবনটি শেষ করে পাশের কয়েকটি স্থান দেখলাম। কোন স্থানের দেওয়াল জুড়ে এক এক করে অগুণতি স্বর্ণমূর্তির সমাবেশ, কোনটিতে নানান কারুকার্যময় দেব-দেবতার প্রতিকৃতি। দর্শনার্থী খুব বেশি ছিলেন না। সব মিলিয়ে ২৫/৩০ জন হবেন। তার মধ্যে কিশোর-কিশোরী এবং তরুণ-তরুণির সংখ্যাই বেশি। সবাই হাফ প্যান্ট এবং শর্ট পোশাক পরা। তাঁদের চোখেমুখে পবিত্রতার প্রতিচ্ছবি। ছড়িয়ে ছিটিয়ে তারা আমাদের মতোই ঘুরছিলেন, দেখছিলেন। আমরা বিভিন্ন অবস্থানে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে বাইরের দিকে বেরিয়ে এলাম।
প্রায় ঘণ্টাখানেক হয়ে গেল। আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন ড্রাইভার। হয়তো সময় শেষ বলে বিরক্তও হচ্ছিলেন। গাড়িতে উঠতেই তিনি জানালেন, সময় শেষ কোথায় নামাতে হবে? আমরা আমাদের হোটেলের কথা জানালাম। গাড়ি সেই পথে ছুটলো।
বেলা
দেড়টা মতো বেজে গিয়েছিল। হোটেলে ফ্রেশ হয়ে বেরুনোর কথা ভাবলাম। কারণ হাতে সময় আধা বেলা। অর্থাৎ এই বেরুনোর সময়
থেকে রাত ৮টা-৯টা পর্যন্ত। অপরিচিত জায়গায় এর বেশি সময়
ঘুরবো না। এইটুকু সময় কোথায় ঘুরবো, কী করবো- জানা
নেই।
থাইল্যান্ড
বা ব্যাংককের আশাপাশে অনেক বিখ্যাত জায়গা রয়েছে, যেগুলোই বেড়ানোর স্পট। যেমন পাতোয়া প্রথম পর্যায়ের। নগরীর ভেতরেই রয়েছে পর্বত ঘেরা কো পি পি,
প্যাঙ্গা বে, গ্রান্ড প্যালেস, রাইলে, নর্দান হিল ট্রাইবস, মু কো চ্যাং
ন্যাশনাল পার্ক, আউথা হিস্টোরিক্যাল পার্ক, ডেথ রেলওয়ে, ফুল মুন বীচ, সিমিল্যান্ড আইল্যন্ড প্রভৃতি। এগুলো কোথায়, যেতে হবে কিভাবে- এতোসব ঠিক করার কোন সময়ই ছিল না। কারণ আমাদের বিমানের সময় ছিল পরদিন সকাল ৮টা ৩৫-এ। কিন্তু
এই সময়ের অন্তত ঘণ্টা তিনেক আগে, অর্থাৎ ৫টা ৩৫-এর মধ্যে
এয়ারপোর্টে পৌঁছাতে হবে। আবার ব্যাংকক থেকে এয়ারপোর্টে যেতে ধরে রেখেছি আরও দু’ঘণ্টা আগে,
অর্থাৎ রাত ৩টা ৩৫-এর মধ্যে
রওনা হতে হবে। এই রওনা হতে
আমাদের প্রস্তুত হওয়া, হোটেল চেক আউট করা ইত্যাদির জন্য আরও দু’ঘণ্টা আগে
থেকে শুরু করতে হবে। তার মানে হলো আমাদের রাত ১টার পর থেকেই তৈরি
হতে হবে। আবার একটু না ঘুমালেও তো
নয়ই। তাই যেটুকু সময় হাতে তাতেকরে কোথাও বেড়ানোর সুযোগ নেই। খাওয়া-দাওয়ার পর রাস্তায় হেঁটে
হেঁটে এবং দোকানপাট দেখে দেখে বেড়ানোর কাজ শেষ করতে হবে।
রুম
থেকে ফ্রেশ হয়ে বের হলাম। প্রথমেই হোটেলের সামনের লম্বা রাস্তা মাড়ানো। প্রচÐ গরম। রাস্তা ফাঁকা। কী কারণে যেন
এদিন বেশিরভাগ পানশালাগুলো বন্ধ। দু’চারটে স্ট্রিট
ফুডের স্টল দেখা যাচ্ছে। আর কিছু ঘর-বাড়ির বারান্দায় মেয়েরা আড্ডা দিচ্ছে। আগেই বলেছি, এখানে ছেলেদের চাইতে মেয়ের সংখ্যা অনেক বেশি। শর্ট পোশাকের অল্প বয়সী মেয়েরাই স্ট্রিড ফুডের স্টল থেকে শুরু করে সব মার্কেট, মল,
সুপার মলগুলোতে দায়িত্ব পালন করে। আমরা স্ট্রিট ফুডের স্টলে পোকা-মাকড়ের ফ্রাই, আর তেলে ভেজে
সেগুলো তৈরি করার দৃশ্য দেখতে দেখতে এগুলাম। অন্তত ৫/৭ মিনিট
হাঁটার পর বড় রাস্তা।
সেখান থেকে ডানে মোড়। তারপর আরও বড় রাস্তা। সেটা
পার হয়ে ওপারে কিছুদূর হাঁটা। তারপর একটা ফুটওভার। সেটার পাশে ম্যাসেজ পার্লারের সামনে ৫/৬ জন
১৪-১৬ বছরের কিশোরীকে
শুয়ে বসে থাকতে দেখলাম। যে ক-বার
এখান দিয়ে গেছি সে ক-বারই
এরকম কয়েকজনকে শুয়ে বসে থাকতে দেখেছি।
আমরা
ফুট ওভার ব্রিজ পার হলাম। ওপারে একটু এগিয়ে বামেই রাধুনী রেস্টুরেন্ট। মোহাম্মদ ইরশাদ আমাদের স্বাগত জানালেন। আরও কয়েক গ্রুপ কাস্টমার ছিল। আমাদের অর্ডার নিয়েই তিনি সবাইকে নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটালেন। মোটামুটি কিছু কাস্টমারকে বিদায় করে তিনি আমাদের কাছে দাঁড়িয়ে পড়লেন। শুরু করলেন নানান গল্প। আমরা খাচ্ছি আর শুনছি। এই
গল্পের ভেতর দিয়ে থাইল্যান্ড সম্পর্কে বহু অজানা তথ্য জানা হয়ে গেল। প্রায় ঘণ্টা দেড়েক কেটে গেল এগুলো শুনতে এবং পর্যালোচনা করতে। যখন দেখলাম সময় চলে যাচ্ছে, তখন বিদায় নেওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। তাঁকে জানালাম, রাতেই আমাদের ডিনার টেবিলে শেষ দেখা হবে। কারণ পরদিন চলে যাবো কুয়ালালামপুরে। চলে আসার সময় আমার স্বামী ইরশাদকে ভিজিটিং কার্ড দিলেন। পরিচয় জেনে
স্বামীকে তিনি একেবারে জড়িয়ে ধরলেন। আবেগে আপ্লুত হলেন। নিজের এবং প্রতিষ্ঠানের পরিচিতি কার্ড দিলেন।
২০
কেজির উপরে কেন লাগেজ নেওয়া যাবে না- তা নিয়ে ভাবছিলাম।
এয়ার এশিয়ায় নাকি এক্সট্রা চার্জ ছাড়া লাগেজ নেওয়া যায় না। কেন- সেটা বের করতে চাচ্ছিলাম। অথচ এই একই বিমানে
আমাদেরকে কুয়ালালামপুর থেকে ঢাকা ফিরতে হবে। সেসময় দুজনের তিরিশ তিরিশ ষাট কেজির লাগেজ এবং আট আট ষোল
কেজির হ্যান্ডব্যাগ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া রয়েছে। কিন্তু ব্যাংকক থেকে যেতে এ সুযোগ দেওয়া
হয়নি। এর কারণ কি
কোনো সিন্ডিকেটিজম? মানে কেউ যাতে ব্যাংকক থেকে মার্কেটিং করে মালয়েশিয়া না যান- সেজন্যই
পরিকল্পিতভাবে এ পন্থা চালু
করা হয়েছে? যা মার্কেটিং, তা
মালয়েশিয়া থেকেই করতে হবে- এটাই কি উদ্দেশ্য? এমন
ব্যবসায়িক পরিকল্পনায় এয়ার কর্তৃপক্ষ, দুই দেশের সিন্ডিকেট এবং এরসঙ্গে আর কারা যুক্ত
কে বলবে!সিন্ডিকেট হলে তো টাকার একটা
ভাগবাটোয়ারার ব্যাপারও থাকে। সেটাই কিনা কে বলবে? হলেও
হতে পারে, না হলেও হতে
পারে। এ নিয়ে সময়
নষ্ট করতে চাইলাম না।
আমরা
ফুটপাত ধরে একদিকে হাঁটলাম চার-পাঁচ কিলোমিটার মতো, ফিরে এসে আরেক দিকে হাঁটলাম তিন-চার কিলোমিটার মতো। হেঁটে রীতিমতো হাফিয়ে উঠলাম। এখানে রিকশা জাতীয় কোনো যানবাহন নেই। আছে ট্যাক্সিক্যাব। তাতে তো নির্দিষ্ট কোন
জায়গায় যাওয়ার জন্য উঠতে হবে। আমাদের তো সে জায়গা
নেই। সুতরাং ট্যাক্সিক্যাবের প্রয়োজন ছিল না। হেঁটে হেঁটে স্বপ্নের জগতে বেড়ানোর মতো দেখছিলাম দোকানপাট, মার্কেট, সুপার মার্কেট, স্ট্রিট মার্কেট, গাড়ি-বাড়ি-ভবন আর মানুষজন। স্বপ্নের
জগৎ বলছি, কারণ এতো সুন্দর সব কিছু হতে
পারে ভাবাই যায় না। অসুন্দরের আর আভিজাত্যহীনতার কোন
কিছুই চোখে পড়ে না। সবই কল্পনাতীত সুন্দর এবং জৌলুসে ভরা। মানুষের পোশাক-আশাক-চাল-চলন দেখে শুধু অভিভূত আর অভিভূত হতে
হয়। দিনের আলো যতো কমছে রাস্তায় মানুষজন ততো বাড়ছে। পথে-ঘাটে শুধু নারী আর নারী। পুরুষের
সংখ্যা সিকি ভাগ। বারোআনা ভাগই কিশোরী-তরুণী। এরা যে পোশাকে ঘুরছে
তা আমাদের দেশে হলে মানুষ চোখ কপালে তুলে স্থির বা ফ্রিজ হয়ে
যেতো। দেশের কিশোর-তরুণদের কেও এখানে এলে ক’দিন হয়তো
নাওয়া-খাওয়া বাদ দিয়ে রাস্তায় পড়ে থাকতো হা করে তাকিয়ে।
কিন্তু এখানে কেও কারও দিকে তাকাচ্ছে না। যার যার মতো চলছেন। একেঅপরের সঙ্গে আচরণ অত্যন্ত মিষ্ট। কোনো অহংকার-দেমাগ নেই। দেখতে-শুনতে কী প্রশান্ত তারা!
আমাদের কাছে মেয়েদের শর্ট পোশাককে মোটেও অশ্লীল মনে হলো না। বরং মনে হলো এমন প্রশান্ত মনের মানুষগুলোর জন্য এমন পোশাকই মানানসই। এদের দিকে খারাপ দৃষ্টিতে তাকানোর ইচ্ছেও জাগে না। এরা তো ধর্মীয় দিক
থেকে বৌদ্ধ। কিন্তু আমাদের ধর্মাবলম্বীদের ভেতর এমন সুন্দরতা নেই কেন? তারা কেন শুধু অশ্লীল আর কুৎসিত চোখে
নারীদের দেখেন? যারা এমনটা দেখেন- তাদের এইসব জায়গায় এসে শিক্ষা নেওয়া উচিৎ বলে মনে হলো।
বেশ
কয়েক দফা বিশ্রাম নিয়ে শপিং কমপ্লেক্সগুলোতে ঢোকার দিকে মনোযোগ দিলাম। সন্ধ্যে পেরিয়ে রাত হয়ে গিয়েছিল। আর রাতেই জমে
উঠছিল গোটা এলাকা। দিনে মানুষজন অনেক কম দেখেছি, কিন্তু
রাতে আস্তে আস্তে তিল ধারণের জায়গা ফুরিয়ে আসছে। ফুটপাতগুলো নারী-পুরুষে গিজগিজ করছে। এখানে নাকি দিনের বেলা অফিসিয়িাল কাজকর্মের জন্য মানুষ বের হয়। আর রাতে বের
হন সব মানুষ। দিনে
ফুটপাতে কোন বোচাকেনার দোকানপাট থাকে না। রাতে এগুলো জমে ওঠে। কোন কোন মার্কেট নাকি রাত দুটো থেকে চালু হয়। সারারাত চলে বেচাকেনা, ব্যবসা-বাণিজ্য। তার মানে হলো দুই শিফটের দিন বা ২৪ ঘন্টা।
১২ ঘণ্টার দিনে এক রকম, আর
বাকি ১২ ঘণ্টার রাত
এক রকম। হয়তো যারা রাতে ব্যস্ত কাজ করেন, তারা দিনে বিশ্রাম নেন। আবার রাতটাতেই তাদের দিনের মতো কাজ শুরু হয়। নিঃসন্দেহে এটা পুরো ২৪ ঘণ্টা কাজে
লাগানোর চমৎকার দৃষ্টান্ত।
কিছু
কেনাকাটা করতেই হলো। লাগেজের কথা চিন্তা করে খুব হিসাব করে কাজ সারতে হলো। তাতে হাতের নগদ অর্থ শেষ হয়ে গেল। খুব কষ্টে রাখা হলো রাতে দু’জন দুটো
পরোটা আর ভাজি খাবার
বাথ। আর খুচরো কিছু
থাকলো বাড়তি হিসেবে।
আলোকোজ্জ্বল
চোখ ধাঁধানো কিশোরীদের পরিচালিত অনেকগুলো সুপার মার্কেট ঘুরে ঘুরে দেখার পর বেশ রাতে
ফেরার আগে খাবার জন্য রাধুনী রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম। অল্প অর্থের কারণে দুই পারোটা আর ভাজি খেলাম।
অপেক্ষা করছিলাম বিলের জন্য। মোহাম্মদ ইরশাদ নতুন নতুন অনেক আইটেম করে সেগুলো খাওয়ানোর চেষ্টা করলেন। আমরা খেলাম না। তিনি আরও অনেক গল্প করলেন। কিন্তু তারপর বিল চেয়ে বিল পাচ্ছি না। এই ফাঁকে যেই
ইরশাদ সরে গেলেন, তখর বেয়ারাকে একটু শক্তভাবেই বললাম বিল কই? সে ইতস্তত করে
বললো, বিল হবে না স্যার! বললাম,
কেন বিল হবে না? তখন দেখলাম, বিনীতভাবে এগিয়ে এলেন ইরশাদ। বললেন, আপনাদের বিল নিতে নিষেধ করা আছে। বললাম কেন? কে নিষেধ করেছে?
তিনি বললেন, তার মালিক নিষেধ করে দিয়েছেন। বলে দিয়েছেন, আমাদের যতো ইচ্ছে এবং যা যা ইচ্ছে
তাই যেনে খেতে দেওয়া হয়। এর কোন বিল
নেওয়া নিষেধ। ইরশাদ জানালেন, আমাদের কথা উনি মালিককে বলেছেন। পরিচয় পেয়ে মালিক সঙ্গে সঙ্গে বলেছেন, আমার দেশ থেকে উনারা এসেছেন, উনাদের সব রকম সেবাযতœ
যেন করা হয়। কোন রকম টাকা পয়সা যেন নেওয়া না হয়। হোটেলের
সবাই সে নির্দেশই পালন
করছেন। ইরশাদ বললেন, তাই আপনাদের কাছ থেকে কোন বিল নেওয়া যাবে না।
আমরা
হা করে চেয়ে রইলাম। অনেক সাধ্য-সাধনা করেও বিল নেওয়াতে পারলাম না। শেষে মালিককে অনেক অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে ইরশাদসহ সবার সঙ্গে গ্রæপ ছবি তুললাম।
পরে বিদায় নিয়ে চলে এলাম। ইরশাদ অবশ্য বলেছিলেন, সময় থাকলে মালিক এসে আপনাদের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু চলে যাচ্ছেন বলে হলো না।
যা কিছু
শিক্ষণীয়
: সামরিক শাসনের দেশ হলেও অর্থনীতির চাকা বেশ ভাল। অর্থনীতির প্রধান উৎস পর্যটন শিল্প। এখানে বিদেশের পর্যটকরা আসেন প্রধানত একটি কারণে। সেটা হলো, এখানে সেক্স ব্যবসা বৈধ। মেয়েরা এটাকে অন্য চাকরির মতোই একটা কাজ বলে মনে করেন। আর দেশের মানুষও
এটাকে কোন রকম খারাপ বা অসম্মানজনক কাজ
মনে করেন না। এটা তারা সম্পূর্ণ বৈধ এবং আইনিভাবে করেন। ফলে এটা নিয়ে কোন ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নেই। যে কোন ব্যবসায়
যেহেতু ট্যাক্স দিতে হয় এবং সেই
ট্যাক্সটাই সরকারের আয়ের উৎস- সে কারণে সেক্স
ব্যবসায়ী মেয়েদের লাইসেন্স রয়েছে। সেই বৈধতা থেকেই তাঁদেরকে ট্যাক্স দিতে হয়। এই সেক্স উপভোগ
করার জন্য বিদেশিরা হুড়মুড়িয়ে থাইল্যান্ড আসেন। বুঝতে পারলাম, অপ্সরির মতো মেয়েদের টাকা দিয়ে ভোগ করার সুযোগ-সুবিধা থাকাটাও এখানে বখাটেপনা না হওয়ার একটা
কারণ। কেননা চাইলেই তো সে মেয়েকে
ভোগ করতে পারছে, বখাটেপনা করবে কেন! আবার করলে রয়েছে কঠিন শাস্তির বিধান। সুতরাং কোন অসভ্যতার সুযোগ নেই। এও বুঝতে পারলাম
আমাদের মতো দেশগুলোতে রাখঢাক নারী জীবনই এনে দিয়েছে সমাজে যতো নষ্টামি, নোংরামি, ধর্ষণ, বখাটেপনা ইত্যাদি।
আমরা
ঘোরার সময় দেখছিলাম ফুটপাতের ধারে ৫/৭ জন
করে দল ধরে অপ্সরীর
মতো মেয়েরা দাঁড়িয়ে আছে। বোঝার উপায় নেই তারা খরিদ্দার ধরার জন্য দাঁড়ানো। এই লাইনে যারা
চলেন তারাই এসব বিষয় ভাল জানেন। এদের বয়স ১৩/১৪ থেকে
২৫-এর মধ্যে। সবাই
লেংটি জাতীয় জিন্সের হাফ প্যান্ট পরা। বুকে খুব শর্ট বøাউজ জাতীয়
কাপড়। আমরা দেখলাম ১৩/১৪ বছরের
একটা অসম্ভব সুন্দরি মেয়ে ‘হাই’ ‘হ্যালো’ বলে খরিদ্দার ধরার চেষ্টা করছে। ডাকার ভঙ্গি দেখে মনে হয়- যেন কতোদিনের পরিচিত, দেখতে পেয়ে ডাকছে। চেহারা দেখে বিশ^াসই হতে চায় না- এই কাজের জন্য
এরা পথে নেমেছে।
পর্যটন
ব্যবসার আরও অনেক দিক আছে। এরমধ্যে ম্যাসেজ পার্লার একটা। আরও আছে চোখ ধাঁধানো শপিং কমপ্লেক্সগুলো বোঝাই মেয়েদের শপিং ব্যবসা। আছে হট ড্রিংক্সের (মাতাল
না হয়ে মদ খাওয়ার) অবাধ
সুবিধা। আছে আকর্ষণীয় সব পর্যটন স্পট।
এগুলোই ব্যাংকক বা থাইল্যান্ডকে স্বর্গতুল্য
করে তুলেছে।
এমনিতে অর্থনীতির প্রশ্নে অন্যান্য দিক যেমন দৈননন্দিন, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় কারবারের দিক দিয়ে দেখতে গেলে যেটা জানতে পারলাম সেটা হলো- দেশটি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চীনাদের উপর নির্ভরশীল। কারণ চীনের সর্বগ্রাসী বাণিজ্য রয়েছে এই দেশে। বোঝা যায় চীন আস্তে আস্তে বাণিজ্যিকভাবে পৃথিবীর বহু দেশ দখল করে নিচ্ছে।
থাইল্যান্ডে
রাজনৈতিক বিষয় সম্পর্কে জানার সুযোগ হয়নি। কারণ সময় স্বল্পতা। তবে এরইমধ্যে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক বিষয়ের অনেকটাই জেনে ফেলেছি।
আগেই
বলেছি, ব্যাংকক পুরো কম্পিউটারাইজড নগরী। অর্থাৎ নগরীর সবকিছুই কম্পিউটারভ‚ক্ত। প্রশাসনের লোকজন রাস্তাঘাট, অফিস-আদালত, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সমস্ত কিছু সরাসরি কম্পিউটারে দেখতে পান। রাস্তায় চলতে গিয়ে কেউ যদি জামার সুঁতোটাও রাস্তায় ফেলেন, বা মুখের থুতু
ফেলেন- সেটাও কম্পিউটারে ধরা পড়বে। এবং সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের গাড়ি গিয়ে হাজির হবে। অপরাধকারীকে ধরে ফেলে জরিমানা করবে। কারণ কোথাও কোন রকম ময়লা ফেলার নিয়ম নেই। একইভাবে যখনই বা যতো রাতেই
হোক, কেও কোন অপরাধ করে পার পাবে না। কম্পিউটারে ধরা পড়ে যাবে। এসব কারণেই এখানে অপরাধ নেই। একদিকে এই কম্পিউটারাইজড সিস্টেম,
আরেক দিকে আইনের শতভাগ প্রয়োগ- নগরীকে পূর্ণ নিরাপদ করে রেখেছে। পুলিশিং ব্যাবস্থাও এতো ভাল যে, সবখানে সব জায়গায় পোশাকে
হোক পোশাক ছাড়া হোক- পুলিশ আছেই। যে কোন অনিয়ম
তারা ধরে ফেলবেই।
যানবাহন
চলাচলের কথাও আগে বলেছি। এখানে কোন যানবাহনের দুর্ঘটনা বা এক্সিডেন্ট হয়
না। যানবাহনগুলো হর্ন বাজায় না। কোন যানবাহন ওভারটেক করে না। সব যানবাহনের চালকের
হাতেই রয়েছে ল্যাপটপ এবং মোবাইল। তা দিয়েই তারা
ট্রাফিক নির্দেশ পালন, পথঘাট দেখা, জ্যাম বা অন্য কোনো
সমস্যা দেখতে পান। এখানে সিগন্যাল বাতি উপেক্ষা করে কেও চলেন না। পথ যতো ফাঁকাই
হোক, বা যতো রাতেই
হোক- লাল বাতি জ¦লে থাকা
পর্যন্ত কেও রাস্তা পার হবেন না। হলে কম্পিউটারে ধরা পড়ে যাবেন এবং আইনের হাতে তাকে সোপর্দ হতে হবে। এসব কারণে এখানে কোন দুর্ঘটনার রেকর্ড নেই। কোন গাড়ির সঙ্গে কোন গাড়ির ঘষা লেগেছে- এমন কেন তথ্যও নেই। মানুষকে দুর্ঘটনার শিকার করার ক্ষেত্রে এখানে কড়া আইন আছে। যদি কোন মানুষকে কোন যানবাহন থাক্কা দেয় বা এক্সিডেন্ট করে-
তাহলে চালক ও গাড়ির মালিককে
শাস্তি পাওয়ার পাশাপাশি যাকে দুর্ঘটনার শিকার করেছে- তাঁর এবং তাঁর পরিবারের আজীবনের ব্যয়ভার বহন করতে হয়। ফলে এখানে একটা দুর্ঘটনা মানে বহু খেশারত দেওয়ার বিষয়। আরেকটা ব্যাপার হলো- এখানে কোন যানবাহন অশিক্ষিত চালক চালাতে পারেন না। চালককে উচ্চতর ডিগ্রিধারী হতে হয়। এরকম বাধ্যবাধকতা থাকায় আমাদের দেশের মতো যঘন্য অবস্থা থাকবে কী করে! থাকতে
পারে না, নেই।
এখানে
প্রশাসন জনগণের নিরাপত্তায় সব ব্যবস্থা রেখেছে।
গভীর রাতে বাসায় ফিরতে কোন টিনএজকে সমস্যায় পড়তে হয় না, কোন
ছিনতাই-ইভটিজিং নেই। সুতরাং রাত একটায় হোক, দুইটায় হোক- সম্পূর্ণ নিরাপদে সবাই ঘরে ফিরতে পারেন। যে কোন পথে
যে কোন স্থানে চলাচল করতে পারেন। আর এখানে পর্যটকদের
জন্য রয়েছে সর্বাধিক সুযোগ-সুবিধা এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কারণ এই পর্যটকরাই এখানকার
অর্থনীতির বড় চালিকাশক্তি। সুতরাং
কোন ট্যাক্সিক্যাব ওয়ালা যদি কোন রকম খারাপ আচরণ করেন, তাহলে অভিযোগ করা মাত্র ওই ক্যাব চালকের
কঠিন শাস্তি হয়ে যাবে। চাইকি তার লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাবে। তাই এখানে মিটারের বাইরে কোন বাড়তি টাকা দেওয়ার বা নেওয়ার সুযোগ
নেই। চাহিবা মাত্র টাক্সিক্যাবকে সে যেখানেই হোক-
সেখানেই যেতে হবে। আমাদের দেশের মতো ইচ্ছেমত চলার সুযোগ নেই। এক কথায় আইনের
শতভাগ প্রয়োগ থাকলে যা হয়- এখানে
সেটাই হয়েছে। আমাদের দেশে তো আইন কম
নেই, বরং আইনের হিসেব গুণে শেষ করা যাবে না।কিন্তু তার একটারও শতভাগ কেন- সাত-আট ভাগও প্রয়োগে
নেই। ফলে যা হবার তাই-ই হয়!
সুতরাং
এইসব তথ্যগুলো জানা থাকা দরকার। জানা থাকলে যে কারও জন্য
যেমন ব্যাংকক ভ্রমণ হয়ে উঠতে পারে স্মরণীয়, তেমন সমৃদ্ধ হতে পারে নিজের অভিজ্ঞতা। যা দেশের স্বার্থে
কাজেও লাগানো যেতে পারে।
ইয়াসমিন
হোসেন,
ফ্রিল্যান্স লেখক
ছবির ক্যাপশন :
১. হোটেল রয়েল এশিয়ার সামনে লেখক
২. গোল্ডেন মাউনটেন্ট সড়কে
৩. গোল্ডেন মাউনটেন্ট সড়ক
৪. গোল্ডেন মাউনটেন্টের সন্মুখ চত্তর
৫. গোল্ডেন মাউনটেন্ট ফটক
৬. গোল্ডেন টেম্পল
৭. গোল্ডেন টেম্পল
৮. গোল্ডেন টেম্পলের ভেতরে
৯. গোল্ডেন টেম্পলের ভেতরে
১০. গোল্ডেন টেম্পলের ভেতরে
১১. গোল্ডেন টেম্পল চত্তর
১২. স্বামীর সঙ্গে লেখক
১৩. ব্যাংককের একটি সড়ক
১৪. ব্যাংককের সড়ক পথ
১৫. ব্যাংককের শপিংমল
১৬. শপিংমলের ভেতর
১৭. আরেকটি শপিংমল
১৮. শপিংমলের আরেকাংশ
১৯. ব্যাংককের স্ট্রিট ফুড
২০. ব্যাংককের স্ট্রিট ফুড
২১. রাধুনি রেস্টুরেন্ট
২২. রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার ইরশাদ, লেখকের স্বামী ও লেখক